গত তিন দিনের ব্যবধানে কক্সবাজার কলাতলী হোটেল মোটেল জোন এলাকায় পানির স্তর প্রায় ১০ থেকে এগারো ফুট নিচে নেমে গেছে। হঠাৎ ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামায় বেশ কয়েকটি পানি উত্তোলনের মটর নষ্ট হয়ে গেছে। কলাতলীর আশপাশে ব্যাপক পাহাড় কর্তন, গাছপালা ধ্বংস ও হঠাৎ পর্যটকদের চাপে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টারা। তবে পর্যটক কমে গেলেও সুপেয় পানির সংকট রয়ে গেছেই। শুষ্ক মৌসুমে এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলেও জানান তারা।
খোদ পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কলাতলী হোটের মোটেল জোনে হঠাৎ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেনি। তবে আমি জানতাম একসময় এই অবস্থায় হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঁচ বছরে ভূগর্ভের পানি দ্বিগুন নিচে নেমে গেছে। বাড়ছে লবণাক্ততাও। জলবায়ু পরিবর্তন, খোলা জায়গা কমে যাওয়া ও ক্রমান্বয়ে জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়া এর মূল কারণ। সংকট থেকে মুক্তি পেতে পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান তারা।
কক্সবাজার কলাতলী নিটল বে রির্সোট’র ব্যবস্থাপক মোঃ নুরুল আবছার জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করে হোটেল মোটেল জোন এলাকায় পানির সংকট দেখা দেয়। মটর দিয়ে পানি উঠছেনা অনেক হোটেলে। পানি না উঠায় এক পর্যায়ে হোটেল ওশান প্যারাডাইসের দুটি পানির মটর জ্বলে যায়। এছাড়া বেশ কয়েকটি হোটেলের মটর জ্বলে নষ্ট হয়। এক পর্যায়ে দেখা গেছে কলাতলীতে পানির স্তর প্রায় ১০ থেকে ১১ ফুট নিচে নেমে গেছে। আগে যেখানে ২০ ফুট পানির নিচে পাইপ থাকতো এখন তা আরও ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। তিনি আরও জানান, কলাতলীর আশপাশে বেশ কয়েকটি পাহাড় ছিল। বর্তমানে এসব পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে গাছপালাও। এসব ধ্বংস করার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। কারণ গাছের শিকড় ও পাহাড় গুলো পানি ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখে। সুতরাং এসব ধ্বংস হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতাও কমে যায়। এতে পানির স্তর নিচে চলে যায়।
কক্সবাজার পৌরসভার স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি নারী কাউন্সিলর মঞ্জুমন নাহার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। এখনি প্রস্তুতি না নিলে সামনে সুপেয় পানির সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। পানিতে লবণাক্ততাও বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গা ও জলাধার কমে যাওয়াও সংকটের একটা কারণ।’
তিনি বলেন,‘সরকার যদি পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সাগর থেকে দূষণমুক্ত পানি উত্তোলন ও প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো সংরক্ষণে এখনি উদ্যোগ না নেয় তাহলে সামনে কঠিন বিপদ অপেক্ষা করছে।’
কলাতলী হোটেল মোটেল গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, কলাতলীতে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক মটর অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে ক্রমান্বয়ে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও নলকূপ স্থাপন করা হতো ১০০-১২০ ফুট পর্যন্ত। এখন সেখানে ২০০ ফুটের উপরে যেতে হয়। এছাড়া পানিতে লবণাক্ততা থাকায় বেশি গভীরে পাইপ স্থাপন করতে হচ্ছে অনেক হোটেলে।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, কলাতলীতে অপরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে বোম- মটর সংযুক্ত গভীর নলকূপ। দেড়-দুই হাজার ফুট দূরত্বের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপনের নিয়ম রয়েছে। অথচ এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এছাড় নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস করা ও ব্যাপক পাহাড় কাটার কারণে এ বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিবেশ আরও অবনতি হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।