কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন বেসরকারী হাইস্কুল ও কেজি স্কুলে চলছে ভর্তি ও বই বাণিজ্য। পর্যাপ্ত সরকারী স্কুল না থাকা এবং সরকারী স্কুলে পর্যাপ্ত আসন খালি না থাকার সুযোগ নিচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বেসরকারী স্কুলগুলোর মালিকেরা। এরফলে কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকেরা পড়ছেন বেকায়দায়। এ ঘটনায় তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক ডজনের বেশি নয়। কিন্তু বেসরকারী স্কুলের সংখ্যা অর্ধ শতের বেশি। শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় ভাড়া ঘরের উপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে এসব কেজি স্কুল। এসব স্কুলে একদিকে চলছে ভর্তি বাণিজ্য, অন্যদিকে বই নিয়েও চলছে বাণিজ্য। ভর্তি বাণিজ্য আবার একেক স্কুলে একেক ধরনের।শহরতলীর সমিতি পাড়ায় কক্সন মাল্টিমিডিয়া স্কুল নামক প্রতিষ্ঠিানে নার্সারী ক্লাসে ভর্তি ফি ৩ হাজার টাকা, বই বাবদ ৬শ’ টাকা, স্কুল পোষাক বাবদ ৯২৫ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে, মাসিক বেতন ৬শ’ টাকা করে ধার্য করে নিচ্ছে। শহরের বায়তুশ শরফ হাইস্কুলে ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ফি: নেয়া হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। পৌর প্রি-প্যারাটরি স্কুলে নেয়া হয় প্রায় ১ হাজার ৮শ টাকা। অথচ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি ফি: মাত্র ১ হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু সরকারী নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির ফি: নেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আবার এই স্কুলে প্রাথমিকে ভর্তির জন্য ফি: নেয়া হচ্ছে অন্তত ১ হাজার ৭শ টাকা। একই হারে ভর্তি ফি: নেয়া হচ্ছে কলাতলীস্থ সৈকত কিন্ডার গার্টেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। আবার সানি বীচ ও ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি ফি: আরো বেশি। আর উচ্চহারের ফি: এর চাপে বেকায়দায় রয়েছে শ্রমজীবী ও সীমিত আয়ের অভিভাবকেরা।
এতো গেল ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে কথা। ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত শিশুদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে পাঠ্যসূচীর বাইরের ঐচ্ছিক বই। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের এসব ঐচ্ছিক বই নিয়েও চলছে স্কুলগুলোর গলাকাটা বাণিজ্য। মাত্র একটি ২০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ধরা হচ্ছে ১২০ টাকা। অথচ প্রকাশকদের কাছ থেকে লাইব্রেরীগুলো এসব বই কেনে মাত্র ৩০টাকায়। লাভের অংশগুলো ভাগ বাটোয়ারা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও লাইব্রেরী মালিকেরা। আবার লাভের হার প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। কলাতলীস্থ সৈকত কিন্ডার গার্টেন স্কুল গত বছর তাদের নির্ধারিত ঐচ্ছিক বই বিক্রির জন্য শহরের রক্ষিত মার্কেটস্থ বিদ্যাসাগর লাইব্রেরীর সাথে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এবছর তারা শহরের পান বাজার সড়কের আরেকটি লাইব্রেরীর সাথে দেড় লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। একই চিত্র শহরের অন্যান্য বেসরকারী স্কুলগুলোর ক্ষেত্রেও। শুধু তাই নয়, স্কুলের নির্ধারিত পোষাক বা ইউনিফর্ম নিয়েও চলছে ভয়াবহ বাণিজ্য। টেইলার্স বা দর্জির দোকানের সাথে চুক্তি করে সেখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের কমিশন। এভাবে বেসরকারী স্কুলগুলোর চরম বাণিজ্যিক মনোবৃত্তির নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে শিক্ষাদানের এ মহান পেশাটি।
এবিষয়ে শহরের কলাতলী এলাকার অভিভাবক মস্তুরা আকতার বলেন- ‘অপর্যাপ্ত সরকারী স্কুল ও বিভিন্ন স্কুলে আসন না থাকার কারণে এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে মান সম্পন্ন শিক্ষা না থাকায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়ে কেজি স্কুলসহ বেসরকারী স্কুলগুলোর দিকে ঝুঁকছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কক্সবাজার সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী স্কুলগুলোর বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি শোভন নয় মন্তব্য করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবী জানান।
এবিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনোয়ারুল নাসের বলেন- নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ফি: নেয়া অবৈধ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।