পর্যটন জেলা কক্সবাজার শহর ও টেকনাফের মানবপাচারকারীরা আত্মগোপন অবস্থা থেকে আবারো ফিরে আসতে শুরু করেছে। সামনে শীতকাল, সাগর শান্ত থাকবে। আর এই অবস্থাতে ছোট ছোট নৌকায় মানবপাচার সুবিধাজনক।
জেলার টেকনাফ এলাকায় একেই বলা হয় ‘মানব পাচার মৌসুম’। শীত মৌসুমকে বলা হয় কক্সবাজারের পর্যটন মৌসুম। আর এসময় মানবপাচারকারীরা সক্রিয় থাকে বলে শীতকালকে বলা হচ্ছে মানবপাচারের মৌসুম।
এবারও আসন্ন শীত মৌসুম সামনে রেখে উখিয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার জেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ফিরছে মানবপাচারকারীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা পাচারকারীদের অনেকে এলাকায় ফিরে প্রকাশ্যে বিচরণ করতে শুরু করেছে। মানবপাচারে নানা তৎপরতাও শুরু করেছে তারা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, শীতকালে সমুদ্র শান্ত থাকায় মানবপাচারকারীরা এসময়কে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। কারণ, দেশীয় ছোট ছোট নৌকায় উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। তাই শীতে সাগরের শান্ত অবস্থাকে কাজে লাগাতে কক্সবাজারের দুই হাজারেরও বেশি পাচারকারী সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা আগের মতো স্ব-স্ব অবস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দালালদের নিয়ন্ত্রণে এনে আবারও নেটওর্য়াক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি কয়েকমাস আগে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার হয়ে যাওয়াদের গণকবর আবিষ্কার হওয়ার পর, কক্সবাজার ও টেকনাফের পুলিশ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গেছে। তারপর থেকে অন্তত চারজন মানবপাচারকারী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এছাড়া এ যাবৎ আটক করা হয়েছে প্রায় ১৫০ জন মানবপাচার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। বাকিরাও এলাকার অভ্যন্তরে বা বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেছে।
বর্তমানে জেলার বিভিন্ন জায়গায় তথ্য অনুসন্ধান করে জানা গেছে, প্রতিবছর শীত মৌসুমের আগে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার ঘাট দিয়ে জগন্যতম মানবপাচার করে থাকে। তাই সামনে শীত সেই কারণে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ও মানবপাচারের এয়ারপোর্ট খ্যাত টেকনাফের শীর্ষ মানবপাচারকারীরা জড়ো হতে শুরু করেছে। তারা কেউ যাতে সন্দেহ ও আটক না হয় সেই ব্যাপারে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে একাধিক লোক জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তি, থানার অসাধু পুলিশ, কথিত সাংবাদিক ও মহিলাদের সিন্ডিকেটের আওতায় রাখছে।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার আতাউর রহমান জানান, ‘পাচার মৌসুমকে সামনে রেখে আত্মগোপনকারী আরো পাচারকারী ফিরে আসছে বলে আমাদের কাছে খবর আসতেছে। তাদের আটক করা জন্য আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’ সামনে শীত মৌসুম উপলক্ষে অভিযান আরো জোরদার করা হবে।
তিনি আরো জানান, শীতকালে শান্ত সাগরের সুবিধা নিয়ে যাতে আবার পাচারকারীরা সক্রিয় হতে না পারে সে জন্য পুলিশ বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
পাচার মৌসুমের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি আতাউর রহমান পার্বত্যনিউজকে জানান, ‘সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে সাগর উত্তাল থাকে। আর মানবপাচার করা হয় ছোট ছোট দেশি নৌকায়। ঝুঁকির কারণে তাই তখন নৌকায় মানবপাচার একরকম বন্ধ থাকে। হেমন্ত এবং শীতকালে সাগর শান্ত থাকে। তাই এই সময়ে সাগর পথে ছোট নৌকায় মানবপাচার বেড়ে যায়।’
তথ্য সূত্রে আরো জানা গেছে, চাকুরীর কথা বলে পাচারকারীরা প্রধানত টেকনাফ এবং শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে সাগর পথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মানবপাচার করে। পরে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করে পাচারকারীরা। এভাবে অনেকেই মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।
এব্যাপারে কক্সবাজারে আইএমও এনজিও সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আসিফ মনির জানান, শীত মৌসুম আসলেই আসলে মানবপাচার বৃদ্ধি পায়। এ মানবপাচার প্রতিরোধ করতে হলে একমাত্র মানুষকে সতেচন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, আইএমও সংস্থার মাধ্যমে এলাকার লোকজনের মাঝে সচেতনতা তৈরিসহ একাধিক অভিাবাসীদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, শীত মৌসুমকে সামনে রেখে মানবপাচারকারীরা এলাকায় ফিরে আসছে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। এ কারণে মানবপাচারকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া তারা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।