সহজ ম্যাচটা কী কঠিন করেই না জিতল বাংলাদেশ! শ্রীলঙ্কার বেঁধে দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্যটা স্বাগতিক দলটি একসময় অনায়াসেই পেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই ম্যাচটাই শেষ পর্যন্ত দেখল স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা। তবে বাংলাদেশের জয়েই সমাপ্তি হয়েছে সব উত্তেজনার। শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ার পর এই ম্যাচের কী আর গুরুত্ব থাকে! তার পরও ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম আজ সরগরম হয়ে উঠল বেশ কিছু দর্শকের শোরগোলে। নিজেদের দল ফাইনালে উঠতে পারুক, নাইবা তাদের হাতে উঠুক শিরোপা, তৃতীয় হওয়ার মধ্যে একটু মর্যাদাবোধ তো থাকে। এই দর্শকদের‘বসন্তবরণ উৎসব’ বৃথা যায়নি। বাংলাদেশ জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে, তৃতীয় স্থান পেয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ক্রিকেটের যেকোনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন।
ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা সমস্যাই থেকে গেল। জয়রাজ শেখ ও জাকির হাসানের নতুন ওপেনিং জুটিটাও আজ ১ রানের বেশি স্থায়ী হয়নি। আগের ম্যাচগুলো মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করা জাকির হাসান ফিরে গেছেন বিনা রানেই। দ্বিতীয় উইকেটে হাল ধরেন জয়রাজ শেখ ও জাকির আলী। কিন্তু জাকির আলীর দুর্ভাগ্য, যখন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়, তাঁর রান ছিল ২৫। এর পর পরই ২৬ রান করে জয়রাজ যখন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, আস্কিং রেটটা বেশ বেড়েই যায় বাংলাদেশের।
এখান থেকে দলকে টেনে তোলেন নাজমুল হাসান ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। দুজনেই নিয়মিত সিঙ্গেল দিয়ে সচল রেখেছেন স্কোরবোর্ড। মিরাজ পেয়েছেন নিজের টানা তৃতীয় ফিফটি। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে দুজনের ব্যাটে যখন সহজ জয় দেখছিল দল, হঠাৎই যেন রান আউটের মড়ক লাগতে শুরু করে।
প্রথমে রান আউটের শিকার অধিনায়ক মেহেদী, প্রায় অসম্ভব একটা রান নিতে গিয়ে রান আউট তিনি ৫৩ রানে। নাজমুলও একইভাবে ভুল বোঝাবুঝির শিকার, রান আউট ৪০ রানে। হঠাৎ করেই যেন ম্যাচটা কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য।
সেখান থেকে পথ দেখাচ্ছিলেন শফিউল হায়াত ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পঞ্চম উইকেটে দুজনের ২৭ রানের জুটি বাংলাদেশকে জয়ের আরেকটু কাছে নিয়ে যায়। ২১ রান করে শফিউল ফিরে যাওয়ার পর আবারও ম্যাচটা দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মতো। শেষ চার ওভারে তখন দরকার ছিল ৩১ রান। শেষ পর্যন্ত ৪৮ তম ওভারটাই বাংলাদেশের জন্য পয়া হয়ে আসে। ওই ওভারে ১২ রান নিয়েই ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন সাইফউদ্দিন-মোসাব্বেক। ওঁরা কেউই অবশ্য শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি। তবে বাংলাদেশের জিততে সমস্যা হয়নি, কেননা শেষ ওভারে জয়ের দরকার ছিল মাত্রই ৪ রান। জাকিরই আবার মাঠে নেমে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন চার মেরে।
এর আগে সকালে ব্যাট করতে নেমে ২১৪ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। মেহেদী নিয়েছেন ৩ উইকেট, সঙ্গে দারুণ এক ফিফটিতে বাংলাদেশের অধিনায়কই হয়েছেন ম্যাচসেরা।