সদর হাসপাতালে মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করে জখমি সনদ দিচ্ছে
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬
৪০৫
বার পড়া হয়েছে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করে জখমি সনদ দিচ্ছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সোলতান আহমদ সিরাজী। ৩ জন মেডিকেল অফিসারের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার পর জখমীকে পরীক্ষা করে সনদ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি তা মানছেন না। তিনি নিজেই জরুরী চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে ২টি স্বাক্ষর করে জখমী সনদ সরবরাহ করছেন। সম্প্রতি আদালতে ভিকটিম কর্তৃক দাখিল করা এমনই একটি জখমী সনদ দেওয়ার বিষয়ে আরএমও সিরাজীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রামু থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় (জিআর মামলা নং-১৯৫/১৪) ভিকটিম শামশুন্নাহারের পক্ষে কক্সবাজার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে আরএমও সিরাজীর দেওয়া একটি জখমী সনদ দাখিল করা হয়। সম্প্রতি ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামী ওবায়দুল হকের জামিন আবেদনের শুনানিকালে মুখ্য বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করেন দেখেন, আসামী ওবায়দুল হক কর্তৃক ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা ভিকটিমকে তলপেটে কিল, লাথি, ঘুষি মারার ফলে মৃত বাচ্চা প্রসব হওয়ার অভিযোগ আনা হলেও ফৌজদারী দরখাস্তে কিংবা জখমী সনদপত্রে কত তারিখে বাচ্চা প্রসব হয় কিংবা আসামীর আঘাতের ফলেই ওই বাচ্চা নষ্ট হওয়া সংক্রান্ত কিছুই উল্লেখ নেই। জখমী সনদ পর্যালোচনায় আঘাতের প্রকৃতি ও বর্ণনা এতোটাই দুর্বোধ্য ও অপাঠ্য যে আঘাতের প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়না। ৩ জন মেডিকেল অফিসার কর্তৃক কমিটি গঠন করে জখমীকে পরীক্ষা করে জখমী সনদ ইস্যু করার বিধান থাকলেও সনদে সোলতান আহমদ সিরাজী নিজেই ২ টি স্বাক্ষর করেন। এতে ভিকটিম শামশুন্নাহারকে আদৌ বিধি মোতাবেক মেডিকেল অফিসার কর্তৃক পরীক্ষা করা হয়েছিল কিনা, কিংবা জখমী সনদটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র মোতাবেক ইস্যু করা হয়েছিল কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। এ অবস্থায় অভিযুক্ত ওবায়দুল হকের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়াও ডাঃ সোলতান আহমদ সিরাজী কর্তৃক ২টি স্বাক্ষর করে কেন জখমী সনদ দেওয়া হচ্ছে এবং কেন জখমী সনদপত্রের বক্তব্য পাঠযোগ্য অক্ষরে প্রদান করা হচ্ছে নাÑএ বিষয়ে ২ সপ্তাহের মধ্যে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও ভিকটিম শামশুন্নাহার এর জখমী সনদটি বিধি মোতাবেক গঠিত কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত কিনা তা পরীক্ষা করে পাঠযোগ্য অক্ষরে/টাইপ কপির মাধ্যমে ওই সময়ের মধ্যে আদালতে প্রেরণের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের আদেশ হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদ্য বদলীর আদেশ পাওয়া (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে) জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রতন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা আজই (গতকাল) আমার হাতে পৌঁছেছে। ওই বিষয়ে আমি ডাঃ সোলতান আহমদ সিরাজীর কাছে লিখিত জবাব চাইবো এবং আদালতের নির্দেশ অনুসারেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
এদিকে গত ১৩ মার্চ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সোলতান আহমদ কর্তৃক ইস্যু করা জখমি সনদগুলো আদালত ও থানায় গ্রহন না করার জন্য আদেশ চেয়ে সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করেছেন জেলা সদর হাসপাতালের জরুরী চিকিৎসা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুস সালাম। ওই আবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিপত্রের আদেশ লঙ্ঘন করে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নিজেই কর্তব্যরত চিকিৎসক সেজে জখমী সনদ প্রদান করে আসছেন। অথচ আবাসিক মেডিকেল অফিসার কোনদিন জরুরী বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন না। রোগীর চিকিৎসা প্রদান করেন না। তিনি শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। তবুও নিজেই প্রত্যেক ক্ষেত্রে কর্তব্যরত কিচিৎসকের ভূমিকায় শুধুমাত্র রেজিস্ট্রার খাতার অন্য অফিসারের লিপিবদ্ধ করা জখমী নোটগুলো অনুসরণ করে ভিকটিমের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা না করে ৩ সদস্যের স্থলে এক সদস্য হয়ে ডানে ও বামে একাই স্বাক্ষর করে জখমী সনদগুলো দিয়ে আসছেন। যা ২০/১১/১৯৯৫ ইং তারিখের সংশোধিত পরিপত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ অবস্থায় বিধি বহির্ভূত জখমী সনদগুলো আদালত কিংবা থানায় গ্রহন না করার পক্ষে এবং তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃক প্রত্যয়পত্রগুলো অগ্রগতি না করার জন্য আদেশ দেওয়া আবশ্যক।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মহিউদ্দীন মোহাম্মদ আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ডাঃ আবদুস সালামের আবেদনটি তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরতদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডাঃ সোলতান আহমদ সিরাজী প্রায় প্রতিদিন মোটা টাকার বিনিময়ে লোকজনকে জখমী সনদ সরবরাহ করেন। একেকটি জখমী সনদের জন্য ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। পুরো টাকা লেনদেন হয় সিরাজীর সহকারি সেলিমের মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেলিমই তার কাছে জখমী সনদ প্রত্যাশী লোকজনে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে বুধবার সন্ধ্যায় এবং গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফা আরএমও সোলতান আহমদ সিরাজীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। অন্য কোনভাবে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।