সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্বাগত জানান দলের সাধারণ সম্পাদককে। দুই মাস ১১ দিন পর প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনাল প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদের। আজ থেকে মন্ত্রণালয় ও দলের দৈনন্দিন কাজে সময় দেবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
বিমানবন্দরে ওবায়দুল কাদেরকে শুভেচ্ছা জানাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শ ম রেজাউল করিম,
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমেদ
হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিএম মোজাম্মেল, আবদুস সবুর, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, এসএম কামাল হোসেন, বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, ইকবাল হোসেন অপু, সাদেক খান, নাজমা আক্তার, অপু উকিল, মোল্লা আবু কাওসার, রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, গোলাম রাব্বানী প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা।
বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রোজার মধ্যেও কষ্ট করে আপনারা এসেছেন। আমি সে জন্য কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। আসুন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের যে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক এটাকে কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করব। তিনি এ সময় নেতাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আমি না থাকার পরও টিমওয়ার্কটা ধরে রেখেছেন। যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন, তা আমাকে অভিভূত করেছে।
ওবায়দুল কাদেরের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব-উল আলম হানিফ এ সময় তার পাশে বসা ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের জীবনটাই হলো স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার মতো। আমরা এটা শিখেছি বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে। শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আমি এ শিক্ষা পেয়েছিÑ একজন রাজনীতিবিদের সবচেয়ে বড় সত্য মানুষের ভালোবাসা। এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি আমার কাজ ও আচরণ দিয়ে ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি। মানুষের এত ভালোবাসা। এত দোয়া। আল্লাহ সবার দোয়া কবুল করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী পরম মমতায় আমার দেখভাল করেছেন। একজন মা সন্তানের জন্য যা করেন, শেখ হাসিনা আমার জন্য তাই করেছেন। তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। মমতাময়ী মা। যিনি সত্যিকার অর্থেই মাদার অব হিউম্যানিটি। তার কাছে ঋণের বোঝা আরও বেড়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও কোরআন শরিফ পড়ে আমার জন্য দোয়া করেছেন। তার কাছেও আমার কৃতজ্ঞতা।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় খোঁজখবর নেওয়া ও দোয়া করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন। যদিও সে সময় আমি আমার মধ্যে ছিলাম না। আমি জানতাম না তখন কী হয়েছে। আমি শুনেছি প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের কাছে এসে আমাকে নাম ধরে ডাকলে আমি নাকি কেবল তার ডাকে চোখ খুলে সাড়া দিয়েছিলাম। তবে সেসব আমার মনে নেই। সারা দেশে আমার দলের বাইরেরও অনেক মানুষ আমার জন্য দোয়া করেছেন। মসজিদ, মন্দির গির্জায়, প্যাগোডায় প্রার্থনা করেছেন। প্রবাসের আমাকে হাসপাতালে দেখতে প্রবাসীরা ছুটে গিয়েছেন। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সব সময় গণমাধ্যমের বন্ধুরা আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। সংবাদ পরিবেশন করেছেন। আমি তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। এ সময় ভারতের চিকিৎসক দেবি শেঠিসহ চিকিৎসকদের প্রতিও কৃতজ্ঞকতা জানান মন্ত্রী।
গত ৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন ওবায়দুল কাদের। পরদিন ৪ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এর পর সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।