বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ সম্পদশালী বৈশ্বিক সম্পদের অর্ধেকটাই নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনকি গোটা আফ্রিকার মোট সম্পদের চেয়ে বিশ্বের ২’শ জন ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ীর সম্পদের পরিমাণ বেশি!
এশিয়া-আফ্রিকার বাস্তবতায় বৈশ্বিক এই অসম পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে ‘ দ্য প্রাইজ অব প্রিভিলেজ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এনজিও অ্যাকশনএইড। হাতেগোনা কয়েকজনের পাহাড় সমান সম্পদ, লাগামহীন ক্ষমতা আর ২১ শতকের সমতার লড়াইয়ের এই সময়ে সমাজের সবক্ষেত্রে যে বৈষম্য মাথাচাড়া দিচ্ছে তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে এই প্রতিবেদন।
৪৫ টি দেশে কাজের অভিজ্ঞতা এবং তথ্য-উপাত্ত থেকে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে অ্যাকশনএইড। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সাড়ে তিন’শ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে যে পরিমাণ সম্পদের মালিক ঠিক সে পরিমাণ সম্পদ ভোগ করছেন মাত্র ৬৪ জন ধন্যাঢ্য ব্যক্তি।
প্রতিবেদনের সূত্র ধরে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, যখন সারা বিশ্বের সম্পদের মালিক মাত্র কয়েকজন, তখন শুধু দারিদ্র্য আর বৈষম্য নিয়ে কথা বললেই চলবে না। অঢেল সম্পদ, ভোগপ্রবণতা এবং বিত্তশালীদের ক্ষমতার দাপট নিয়েও কথা বলতে হবে। সরকারগুলো বৈষম্য নিরসনের কথা বললেও বাস্তবে কথার সঙ্গে কাজের মিল থাকছে না। বিত্তশালীদের টাকার জোরে সমাজ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকায় সমাজের ঘাড়ে বৈষম্য আপনা থেকেই চেপে বসছে। এই বৈষম্য আরও তীব্র হয় নারীর ক্ষেত্রে। অ্যাকশনএইডের মতে যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীকে পুরুষের মতো মূল্যায়ন করা হতো তাহলে নারীদের উপার্জন দাঁড়াতো ৯ ট্রিলিয়ন ডলারে। সাব-সাহারা এবং এশিয় দেশগুলোর নারীরা পুরুষের তুলনায় ৮০% কম মজুরি পায়।
আয় বৈষম্যের উদাহরণ হিসেবে অ্যাকশনএইড প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দিনাজপুরের নারী কৃষক সাজেদা বেগমের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। সাজেদা অ্যাকশনএইডকে জানান, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বেড়েছে। অথচ যারা আমাদের মতো কৃষিজীবী তাদের জীবনে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।
এই হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কয়েকটি কৌশলগত জায়গা চিহ্নিত করেছে অ্যাকশনএইড। সংস্থাটির প্রতিবেদনে সমাজে ক্ষমতা এবং সম্পদের পুনর্বিন্যাসের জন্য ‘সর্বোচ্চ মজুরি’ ঠিক করে দেয়ার মতো সমাধানের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সাংসারিক কাজে নারীদের কাজের মূল্যায়ন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে অ্যাকশনএইডের প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে নারীর সাংসারিক কাজগুলো আর্থিক মূল্যে হিসাব করার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। কারণ দেশে একজন নারী অলাভজনক সাংসারিক কাজে ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন যেখানে পুরুষকে ব্যয় করতে হয় ১ ঘণ্টা বা তারও কম সময়।
সামগ্রিক এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি বদলে দিতে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে অ্যাকশনএইডের প্রতিবেদনে। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদের সুষম বণ্টনে রাজস্ব ব্যবস্থায় সংস্কার, জনসেবাখাতে বিনিয়োগ,ভূমির ওপর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, কর্পোরেট গণতন্ত্র চর্চা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা।