টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ৩ জন নিহত হওয়ার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে বেশ কয়েক ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থীরা নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে খবর এসেছে। এতে আহত হলেও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সহিংসতার পর কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আহত ও নিহতের ঘটনায় বুধবার পর্যন্ত কোথাও কোন মামলা হয়নি।
সূত্রমতে, প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনে মঙ্গলবার কক্সবাজারের ১৬টি ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এতে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে নির্বাচন পরবর্তী ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কুতুবদিয়ায় নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল, এজেন্ট বের করে দেয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএনপির দু’জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুর হোসেনের ভাইসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নাটকিয়তার পর অবশেষে বুধবার সকালে ওই ইউনিয়নে নুর হোসেনকে ৯৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী সোনা আলী ও বিদ্রোহী প্রার্থী নুর হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে বুধবার দুপুরে সাবরাংয়ের ৪ নং ওয়ার্ডের সিকদারপাড়ায় মেম্বার প্রার্থী ছব্বির আহমদ পরাজয়ের গ্লানি সইতে না পেরে সমর্থকদের সাথে নিয়ে প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় সিকদার পাড়ার মৃত অলি আহমদের ছেলে মুছা আলী (৭৫) ও মৃত কুব্বাছ মিয়ার ছেলে নুর আহমদ (৪৫) গুলিবিদ্ধ হন। তাদেরকে টেকনাফ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বৃদ্ধ মুছা আলী দুপুরে মসজিদে যাওয়ার পথে শব্বিরের ভাই কবির আহমদের সাথে ভোট দেয়া না দেয়া নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ান। পরবর্তীতে তা সংঘর্ষে পরিণত হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছব্বির আহমদের সমর্থক আবদুর রহিম পুক্কু নামের এক ব্যক্তি পর পর ২ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। প্রকাশ্যে গুলি বর্ষনের ঘটনায় পুরো সিকদার পাড়ার লোকজন ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে উক্ত এলাকায় আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ লোকজন বাড়ি থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের শীলখালী এলাকায় বিজয়ী প্রার্থী হাফেজ আহমদ ও পরাজিত প্রার্থী আখতার হোছাইনের মধ্যে দুপুর ২ টায় সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৫ জন আহত হন। এরা হলেন কালামিয়ার ছেলে মাহফুজুর রহমান (৪০), মোখতার আহমদ (৭০), মৃত আহমদ হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম (৩০), মোখতার আহমদের ছেলে আজিজুল হক (৪০) ও হুমায়ুন কাদের (২৪)। আহতদের টেকনাফ হাসাপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে একই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বিজয়ী প্রার্থী মোঃ ইলিয়াছ ও পরাজিত প্রার্থী আমির হোছন সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৬ জন আহত হয়। আহতরা হলেন, নোয়াখালী পাড়ার মৃত ফজল হকের ছেলে ছৈয়দুল হক (৭২), মমতাজ আহমদের ছেলে আয়াতুল তানজিদ (১৯), ফরিদ আলমের ছেলে মোঃ রুবেল (১৮)। আবদুল কাশের ছেলে আলী হোছেন (২৪), মোঃ ইসলামের ছেলে বশির আহমদ(লেডু) (২৪) সোলতান আহমদের ছেলে মোহাম্মদ মিয়া (৩০)। আহতদের টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল মজিদ জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এব্যাপারে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।
সমগ্র বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, বর্তমানে কক্সবাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক রয়েছে পুলিশ।