মুহাম্মদ শামসুল হক শারেক :
একটি মানহানি মামলায় সম্ভবত ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ আমাকে কারাগারে যেতে হতে পারে-এ নিয়ে ছিলাম কিছুটা উদ্বিগ্ন। হ্যাঁ, কারাগারে যাওয়ার এই বিষয়টি সন্ত্রাসী কোন ঘটনা কিম্বা চুরি-চামারী, ভূমি দস্যুতা ও রাজনৈতিক কোন কারণ নয়। দৈনিক হিমছড়ি পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে সংক্ষুব্ধ এক ব্যক্তির মানহানির মামলায় হয়ত আমাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। ওই সংবাদের সাথে বিন্দু-বিষর্ঘ কোন সম্পর্ক-সংশ্লিষ্টতা থাকলেও আমার কোন আফসোস থাকত না।
তবে সহকর্মী সংবাদকর্মীদের অনাড়িপনায় মিথ্যা অভিযোগে এই বিড়ম্বনা হচ্ছে বলেই খানিকটা আফসোস থেকে যাবে। আমার বউ আয়েশা বেগমকে মামলার জাজমেন্টের তারিখ জানার পর থেকেই বলে রেখেছিলাম, ঢাকা-চট্টগ্রামে সফরের সময় যেমন করে আমার সফর ব্যাগটা সাজিয়ে গুছিয়ে দেয়। সেই রকম করে আমার সফর ব্যাগটা তৈরী করে রাখতে। গত ৫বছর মামলার কার্যক্রম শেষে ১৮ ফেব্রুয়ারী রায় ঘোষণার দিন। রায় আমার বিপক্ষে গেলে আমাকে জেলও খাটতে হতে পারে। তাই খানিটা প্রস্তুতি।
প্রায় ৫বছর আগে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন উখিয়ার নিদানিয়ার একটি বিষয়ে দৈনিক হিমছড়িতে প্রকাশিত একটি সত্য ঘটনার সংবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে জনৈক মুহিব্বুল্লাহ আদালতে মামলা করে। পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে আমাকেও মামলায় আসামী করা হয়েছিল। কোর্টে মামলার নং ছিল সিআর ২৬২/১১। প্রায় দীর্ঘ ৫বছর মামলা চলার পরে গতকাল ওই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
অনেক সংবাদ পত্র, সাংবাদিক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে আগেও মামলা হয়েছে, এখনো মামলা হচ্ছে, সামনেও হয়ত আরো মামলা হবে। একটি দৈনিক পত্রিকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় চুড়ান্ত রায় সম্ভবত এটিই বাংলাদেশে প্রথম। সংশ্লিষ্ট আদালতের মাননীয় বিচারকও হয়ত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। তাই এই মামলার রায়টি খুবই উপভোগ্য বলেই আইনজীবী মহলে প্রচারিত। আমার যেসব কলিগদের কাছে আমি অপসন্দের তারা হয়ত রায়ে খুশী হবেন। আবার যেসব গলিগদের কাছে আমি পসন্দের তালিকায় তারা হয়ত খানিকটা বিচলিত হবেন। আমি বলব সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে।
দেশের শীর্ষ সম্পাদকদের মধ্যে আমার পসন্দের একজন সাংবাদিক ও প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক ডেইলী স্টারের সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিনে সারাদেশে অর্ধশত মামলা হয়েছে।
এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অমিও একজন সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি এতে জনাব মাহফুজ আনামের সম্মান মোটেও কমেনি। তাই মানহানির মামলায় আমাকে জেল খাটতে হলেও আমার সম্মান কমে যাবে-এটা আমি মনেকরি না। তার পরেও আমি সকলের কাছে দোয় ও মাননীয় আদলতের কাছে সুবিচার চেয়েছি।
আলহামদু লিল্লাহ আমাকে কারাগারে যেতে হয়নি। মাননীয় আদালতের বিচারক সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা আমাকে ওই মামলা থেকে বেকসুর খালস দিয়েছেন।
তিনি রায়ে লিখেছেন ‘বাদি মুহিব্বুল্লাহ ৫০০.৫০১ ও ৫০২ ধারা মত আনিত মানহানির অভিযোগ প্রমানে চরমভাবে ব্যার্থ হওয়ায় দৈনিক হিমছড়ি সম্পাদক শামসুল হক শারেক ও ফরিদ আলম নামের অপর এক আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হল’। এতে করে সংবাদ পত্র ও সাংবাদিক এবং সম্পাদকের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হল বলেই আমি মনেকরি।
মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি আমি মাননীয় বিচারক সুশান্ত প্রসাদ চাকমা ও আমার পক্ষের সম্মানিত বিজ্ঞ আইনজীবীদলের সদস্য যথাক্রমে এড. রমিজ আহমদ. এড.মুহাম্মদ ইউনুচ, এড. (সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান) সলিমুল্লাহ বাহাদুর, এড. আয়াছুর রহমান, এড. আব্দুল মান্নান, এড. এনামুল হক সিকদার ও এড. সৈয়দ আলম, এড. আইয়ুবুল ইসলাম (সম্পাদক দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ), ও এড. মুহাম্মদ রাশেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আমার অত্যন্ত আপনজন এড. মুহাম্মদ আলীকে।
তিনি এ ব্যাপারে অনেক আইনী সহায়তা ও পরামর্শ দিয়েছেন।
আরো ধন্যবাদ জানাচ্ছি কক্সবাজার সম্পাদক পরিষদের আহবায়ক দৈনিক রূপসী গ্রাম সম্পাদক খোরশেদ আলম ও সদস্য সচিব দৈনিক সমূদ্রকণ্ঠ সম্পাদক অধ্যাপক মঈনুল হাসান পলাশকে।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি দৈনিক হিমছড়ির প্রধান সম্পাদক আলহাজ্ব অলী হাচ্ছান চৌধুরী, দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, দৈনিক হিমছড়ির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক হাসানুর রশীদ এবং সাংবাদিক কায়ছারুল ইসলামকে।
কায়ছারুল ইসলাম গত ৫টি বছর আমার সাথে কোর্টে হাজির থেকে সহায়তা দেয়ায় তাকে আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।