টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের নেতা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে এই মামলায় আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. আমিনুল ইসলাম এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক ১০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
তদন্ত শেষে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয়। এতে আমানুর ও তাঁর তিন ভাইসহ মোট ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রে ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
আমানুর টাঙ্গাইল-৩ আসনে (ঘাটাইল) আওয়ামী লীগের সাংসদ। তাঁর তিন ভাই হলেন টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান (মুক্তি), ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা)।
অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন সাংসদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, আনিছুল ইসলাম (রাজা), মোহাম্মদ আলী, সমীর, ফরিদ আহমেদ, আমানুরের দারোয়ান বাবু, যুবলীগের তৎকালীন নেতা আলমগীর হোসেন (চাঁন), নাসির উদ্দিন (নুরু), ছানোয়ার হোসেন ও সাবেক পৌর কমিশনার মাছুদুর রহমান।
আসামিদের মধ্যে রাজা, মোহাম্মদ আলী, সমীর ও ফরিদ কারাগারে আছেন। সাংসদ আমানুর, তাঁর তিন ভাইসহ ১০ আসামি পলাতক। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা খুবই কৌশলী হওয়ায় তাঁদের দীর্ঘদিনেও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁর কলেজপাড়ার বাসার সামনে পাওয়া যায়। তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনি কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি। প্রথমে থানার পুলিশ ও পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত শুরু করে। মামলার তদন্তে এই হত্যায় সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইদের জড়িত থাকার তথ্য বের হয়ে আসে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই খান পরিবার টাঙ্গাইল শহরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তাদের দাপটের মুখে এলাকায় ও দলে কেউই মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। ফলে চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অর্ধশত মামলা হলেও বাদী ও সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হননি। এ কারণে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আবার কিছু মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
এ পরিস্থিতিতে ২০১২ সালের শেষ দিকে খান পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেন। একই পদে সাংসদ আমানুরের ভাই সহিদুরও প্রার্থী হতে সক্রিয় ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ফারুককে বিরত রাখতে না পেরে তাঁকে সাংসদ ও তাঁর ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন বলে মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
নিহত ফারুক ছাত্রজীবনে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। একাত্তরে মুক্তাঞ্চল থেকে প্রকাশিত রণাঙ্গন নামের একটি পত্রিকার সহসম্পাদক ছিলেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ‘প্রতিরোধ যুদ্ধে’ অংশ নিয়ে পঙ্গু হন তিনি।