পর্যটকদের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা। কারণ, সেন্ট মার্টিনে ঘোরা অনেকটা ছকে বাঁধা। টেকনাফ থেকে জাহাজে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এই প্রবাল দ্বীপে যেতে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। যাঁরা সকালে গিয়ে বিকেলে টেকনাফ ফিরে আসেন তাঁরা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের সময় পান দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এত অল্প সময়ে আট বর্গকিলোমিটারের পুরো দ্বীপ ঘোরা কষ্টসাধ্য। তা ছাড়া বাহন বলতে শুধুই ভ্যান। এই বাহনে কতই আর ঘোরা যায়! তাই বাই সাইকেলে ঘোরার এই প্রক্রিয়া মন্দ না।
১৫ জানুয়ারি সেন্ট মার্টিনে গিয়ে দেখা যায়, জেটিঘাট থেকে শুরু হয়ে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাড়ি ‘সমুদ্রবিলাস’ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পাকা সড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে সারি করে রাখা হয়েছে সাইকেল। পর্যটকেরা যে যার মতো সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। তবে সাইকেলে ভ্রমণকারীদের দলে বেশির ভাগ তরুণ। অবশ্য মাঝ বয়সীও রয়েছেন কয়েকজন। এর মধ্যে ঘাটে নামল জনা বিশেকের একটি পর্যটক দল। সবার পরনে আকাশি টি-শার্ট। এই দলে আছেন তরুণ থেকে মাঝ বয়সী। সবাই নিলেন সাইকেল। এরপর প্যাডেলের পা দিয়েই হারিয়ে গেলেন।
এই ফাঁকে কথা হয় সাইকেলের তত্ত্বাবধানে থাকা মোহাম্মদ জমির ও মোহাম্মদ শাহীনের সঙ্গে। তাঁদের দুজনের কাছে রয়েছে ৪০টি সাইকেল। তাঁরা জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চালু হয়েছে সাইকেল ভ্রমণের এই কার্যক্রম। জেটি ঘাটে মজুত থাকে অন্তত ৩০০ সাইকেল। ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা।
তাঁরা জানান, দল বেঁধে লোকজন বেরিয়ে পড়ে সাইকেল নিয়ে। পুরো দ্বীপ ঘুরতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। এ হিসাবে চার ঘণ্টায় পুরো দ্বীপ ঘুরে আসতে খরচ যায় ১৬০ টাকা। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শ জন পর্যটক সাইকেলে দ্বীপ ভ্রমণ করছেন। এর মধ্যে কেউ এক ঘণ্টা, কেউ দুই-তিন ঘণ্টাও সাইকেলে চড়েন।
এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরিতে কেটে যায় কয়েক ঘণ্টা। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা দুইটা। দেখি কয়েকজন সাইকেল আরোহী ফিরছেন। তাঁদের একজন সোহরাব হাসান। তিনি এসেছেন কুিমল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে। তিনি জানান, প্রথম বার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করছেন।
সোহরাব বলেন, ‘ সকাল ১০টায় জেটিঘাট থেকে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিছু দূর গিয়ে ১০ মিনিটের বিরতি। এরপর আবার শুরু। এবার সোজা দক্ষিণ প্রান্তে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছিল ভাসমান আরেক দ্বীপ ছেড়াদিয়া। যেতে হবে সেখানেও। ভাটার টানে প্রবাল পাথর ভেসে ওঠে ছেড়াদিয়ায় যাওয়া রাস্তা তৈরি হলো। পর্যটকেরা অনেকে হেঁটে ছেড়াদিয়া যাচ্ছেন। আমিও গেলাম। নীলজলে ঘেরা এই দ্বীপে লোকবসতি নেই। অপরূপ সৌন্দর্য। শেষে ছেড়াদিয়া থেকে সাইকেল চালিয়ে সেন্ট মার্টিনের পূর্ব পাশ দিয়ে জেটিঘাটে আসি। এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা।’
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন জানান, এখন প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক টেকনাফ থেকে ছয়টি প্রমোদতরী ও ৩০টির বেশি ট্রলারে প্রবালদ্বীপ ভ্রমণ করছেন।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করব; কিন্তু তাঁর প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে নয়। সেন্ট মার্টিনকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার।’