আহমদ গিয়াস :
কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। গত মাসাধিককাল ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও গত পহেলা বৈশাখের আগের রাতের ভূমিকম্পের পর থেকে এ অবস্থা আরো তীব্র হয়েছে। এরফলে বাজারে সামুদ্রিক মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াগত কারণে মাছের দল বঙ্গোপসাগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় মাছের এ সংকট বলে মনে করেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় প্রায় চার হাজার নৌ-যান বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে। এসব নৌ-যান গড়ে প্রতিদিন ৬শ থেকে ৭শ টন পর্যন্ত মাছ ধরে থাকে। সাগর থেকে আহরিত মাছ বিভিন্ন মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে এনে ট্রাকযোগে জেলার বাইরে সরবরাহ করা হয়। এরমধ্যে নিজস্ব ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আড়াইশ থেকে ৩শ টন মাছ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। আরো একশত টন মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানী করা হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে দুইশ থেকে আড়াইশ টন মাছ সূর্যের তাপে শুকিয়ে শুটকি তৈরী করা হয়। সাগরের লক্ষাধিক কিলোমিটার এলাকা থেকে মাছ শিকার করা হয়।
কক্সবাজার শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গতকাল শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, এখানে তেমন প্রাণচাঞ্চল্য নেই। ব্যবসায়ীদেরও তেমন আনাগোনা নেই। নিস্প্রাণ এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে অলস সময় পার করা মৎস্য ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে প্রতিদিন গড়ে ৬শ থেকে ৭শ টন মাছ আহরিত হয়। যার অধিকাংশই কক্সবাজার শহরের ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাধ্যমে স্থল ভূ-খন্ডে আসে। কিন্তু মাসাধিককাল ধরে গড়ে আধা টনও ধরা পড়েনি। এমনকি গত পহেলা বৈশাখের আগের রাতের ভূমিকম্পের পর থেকে কোন মাছই সাগর থেকে আসেনি। কক্সবাজার বঙ্গোপসাগর এখন প্রায় মাছশূণ্য হয়ে পড়েছে।
শহরের দরিয়ানগর এলাকার ট্রলার মালিক নজির আলম জানান, সাগরে মাছ ধরা পড়ছে না বলে ট্রলার মালিকেরা গত এক মাস ধরে মাছধরা বন্ধ রেখেছে। এরফলে মৎস্য ব্যবসায়ীদের খুব দুর্দিন যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান- গত এক মাসের বেশি সময় ধরে সাগরে মাছ ধরা না পড়ায় জেলার লক্ষাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী এখন বেকার সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু কী কারণে সাগরে মাছ ধরা পড়ছে না, তা জেলে-বহদ্দারদের অজানা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে সাগরে মাছ ধরা না পড়ায় বাজারে সামুদ্রিক মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে বাজারে পুকুরের মাছ এবং গরু-মুরগীর মাংসের দামও বেড়ে গেছে।
সাগরে মাছ কম ধরার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার কক্সবাজার সামুদ্রিক মাৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ ইনামুল হক বলেন- এতে উদ্বেগের কিছুই নেই। আবহাওয়াগত কারণে মাছের দল ঝাঁক বেধেঁ বঙ্গোপসাগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় মাছের এ সংকট। আবহাওয়া অনুকূল হলে মাছের ঝাঁক আবারো বঙ্গোপসাগরে ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।