কক্সবাজার অনলাইন প্রেস ক্লাব ও বনপা’র উদ্যোগে গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারী ২০১৬ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পিকনিকের আয়োজন করা হয় । এর উপর ভিত্তি করে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মধ্যে ‘ভ্রমণ কাহিনী’ প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেয়া হয় । অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাছাই করে কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন)র সৌজন্যে ১ম পুরস্কার ২০০০ টাকা , ২য় পুরস্কার –১৫০০ টাকা ও ৩য় পুরস্কার – ১০০০ টাকা দেয়া হবে। প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে আজ ১ম কিস্তির ভ্রমণ কাহিনীাটি প্রকাশ করা হল । পাঠক প্রিয়তা যাচাইয়ে ফেসবুকে শেয়ার ও কমেন্টকে বিবেচনা করা হবে। তবে প্রেসক্লাব ও বনপা কর্তৃপক্ষ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। – কক্সবাজার অনলাইন প্রেস ক্লাব ও বনপা কক্সবাজার ।
এস এম আরোজ ফারুক :
কক্সবাজার অনলাইন প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে ২২ জানুয়ারী ২ দিনের জন্য সেন্ট মার্টিনে আনন্দ ভ্রমনে সিনিয়র সাংবাদিক ভাইদের সাথে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। প্রায় সবাই আমার সিনিয়র সাথে ছিলেন তাই মাইন্ড সেট করেছিলাম ভ্রমনে এসেছি শুধু মজা করবো নিউজ বা কলামের বিষয়টা বড়রাই দেখবেন। হোক এটি ভ্রমণ কিন্তু সাংবাদিকদের একটি বদ অভ্যাস যেখানে যাই হোক দু-কলম তাদের লেখাই চাই। তাই ভাবলাম প্রায় ৪৫ জন সাংবাদিকের পা পড়েছে ছোট্ট এই ভূ-খন্ডে এবার দ্বীপটির ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈশিষ্ট, সৌন্দর্য সহ সব কিছুই উদ্ধার হবে। তাই দ্বীপ নিয়ে নিউজ করার ব্যাপারটা আমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। দু’দিন পরে কক্সবাজার ফিরে এসে যা ভেবেছিলাম তাই দেখলাম। আমার সহ-কর্মীরা সেন্ট মার্টিন নিয়ে একটার পর একটা নিউজ করেই যাচ্ছেন। দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকার সিনিয়র ও সিটিএন এর স্টাফ রিপোর্টার শাহেদ মিজান তো ধারাবাহিক প্রতিবেদনই শুরু করে দিলেন। তাদের একের পর এক প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে উঠে আসতে লাগলো দ্বীপটির মানুষের সুখ-দুঃখের কথা, পর্যটকদের আনন্দ, দ্বীপের সৌন্দর্যসহ বিভিন্ন বিষয়।
তবে দ্বীপটির অন্যতম এক বৈশিষ্ট ‘রাতের সৌন্দর্য’ আমার সহকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়েছে। এর কারন যে একটি রাত আমরা সেন্ট মার্টিন ছিলাম সেই রাতে আমাদের অবস্থানরত বাংলোতে আলোচনা, গান ও র্যাফেল ড্র এর আয়োজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
সৌভাগ্য বসত আমি আর আমার বন্ধু ইমরান ফারুক অনিক তীব্র শীত ও বাতাস উপেক্ষা করে অল্প সময়ের জন্য সৈকতে নেমেছিলাম। আর তাতেই আমি আর অনিক সেন্ট মার্টিনের রাতের সৌর্ন্দয্য দেখে মুগ্ধ। তাই এই লিখাটি লিখে সেন্ট মার্টিনের রাতের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করলাম।
বছরজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশের বহু মানুষের ভিড় লেগে থাকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। দ্বীপে মানুষের জীবনযাপন, সমুদ্রের নীল পানির সঙ্গে চমৎকার মিতালি অন্য রকম ভালো লাগা তৈরি করে।
আকাশ আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার। তীরে বাঁধা নৌকা, সারি সারি নারকেলগাছ আর ঢেউয়ের ছন্দ, কখনো থেমে থেমে, কখনো আবার দমকা হাওয়ার স্পর্শ। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। বালু, পাথর, প্রবাল কিংবা জীববৈচিত্র্যের সমন্বয়ে জ্ঞান আর ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনুপম অবকাশ কেন্দ্র এই প্রবাল দ্বীপ। বছরজুড়ে পৃথিবীর নানা দেশের বহু মানুষের ভিড় লেগে থাকে এখানে। দ্বীপে মানুষের জীবনধারা, সমুদ্রের নীল পানির সঙ্গে চমৎকার মিতালি অন্য রকম ভালো লাগা তৈরি করে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গেলেও প্রায় ৭০ ভাগ পর্যটকই দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসেন। আর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ তারপর নাফ নদী ও সাগর পাড়ি দিয়ে দ্বীপে যেতে দিনের অর্ধেক সময় লেগে যায়। কক্সবাজারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ঘাটে নোঙর করে দানবের মতো দাড়িয়ে থাকে নৌ-জাহাজ আর টেকনাফ ঘাটে থাকে বাস। সব মিলিয়ে সেন্ট মার্টিনে একদিনের সফরে আসা পর্যটকরা ফিরে যাওয়ার পিছুটানকে সঙ্গী করে দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করার সময় পায় মাত্র ৩ ঘন্টা।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে কেউ প্রবাল দ্বীপ, কেউ বলে স্বপ্নের দ্বীপ, কেউ দারুচীনি, কেউ বা আবার নীলপানির দেশও বলে থাকেন। কিন্তু দ্বীপটির এতো সব বিশেষত্বের মাঝেও আরো একটি বিশেষন রয়েছে যা অনেকেই জানেন না। আর এটি না জানার কারন দ্বীপটিতে রাত্রীযাপন না করা।
এবারে আসা যাক মূল কথায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাতের সৌন্দর্য আর তা অবশ্যই জোৎসনা রাত। দ্বীপটির রাতের জোৎসনা এসে যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন আরও নীলাভ হয়। শোনশান নীরব রাতে চারিদিকে শুধু সাগরের হুংকার আর ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার গর্জন। অপূর্ব, অসাধারণ, অদ্ভুত সুন্দর। হাজারো জোৎসনা রাতের চেয়েও সুন্দর সেন্ট মার্টিনের একটি নির্ঘুম চাঁদনী রাত, এখানে সময়ের কাটা এগিয়ে চলে কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা মেটে না। রাত যত গভীর হতে থাকে ততোই চাঁদ স্পষ্ট হতে থাকে আর মনে হয় কিছুক্ষনের মধ্যেই সে হাতের কাছে এসে ধরা দিবে। মনে হয় এই বুঝি চাঁদটা ছুঁয়া যাবে। শত-সহস্র মাইল দূরের চাঁদনীটা অনেক কাছের মনে হয়। প্রবাল পাথরে বসে পূর্ণিমার চাঁদটা উপভোগ করার সময় অন্যরকম এক ভাললাগা অনুভব হয় যা একমাত্র ঐস্থানে ঐসময় উপস্থিত থাকলেই বোঝা যায়।