সন্ধ্যা হলেই অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অধিকাংশ পয়েন্ট। যার ফলে অরক্ষিত ডায়বেটিস পয়েন্ট ও সুগন্ধা পয়েন্টে প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড। সন্ধ্যার পর কোন পর্যটন ওই এলাকায় গেলেই ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন।
সন্ধ্যা হলেই অরক্ষিত হয়ে পড়ছে সমুদ্র সৈকতের অধিকাংশ এলাকা। মোটেল সৈকতে অবস্থানরত পর্যটক শামসুল হক জানান, কক্সবাজারে এসে দিনের বেলায় ঘুরতে পারলেও সন্ধ্যা হলেই সৈকতের আর কোথাও যাওয়া যায় না। সৈবাল পয়েন্টের উত্তরে অন্ধকার ও অবাঞ্চিত লোকজনের ঘুরাফেরার কারণে কেউ ওই দিকে যেতে চায় না। কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হলেও নিরাপত্তার অভাবে পর্যটকরা অবাধে সৈকতে চলাচল করতে পারে না। এ অবস্থা বিরাজ করলে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন কমতে শুরু করবে।
ডায়বেটিস পয়েন্টের ব্যবসায়ী আবদুল হক জানান, ছিনতাইকারী ও বখাটে যুবকদের কারণে এদিকে আর লোক আসতে চায় না। সন্ধ্যা হলে স্থানীয় লোকজনও আসে না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পর্যটক ডায়বেটিস পয়েন্টে আসে। এখানে কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেই। আইনশৃংখলাবাহিনীর লোকজন এই এলাকায় তেমন টহল দেয় না। যার ফলে সকলের মাঝে ভীতির সঞ্চার হওয়ায় সৈকতের এই পয়েন্টে লোকজন আসে না। গত ১০ জুলাই এই এলাকায় খুন হয়েছে ওমর ফারুক নামের এক ঝিনুক ব্যবসায়ী।
হোটেল লং বীচে অবস্থানরত পর্যটক ফয়সাল মাহমুদ জানান, সন্ধ্যার পর বীচে নামতে না পারায় আমরা হতাশ। বীচের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে আমাদের আর কক্সবাজার আসা হবে না। আমরা কক্সবাজারে একটু ঘুরতে আসি। এতে যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এসে লাভ কি।
সুগন্ধা পয়েন্টের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সন্ধ্যা হলেই এই এলাকা ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের দখলে চলে যায়। এই পয়েন্টে সন্ধ্যার সময় পর্যটকরা আসলেও সৈকতে নামার সাহস করে না। গত দুই দিনে এই পয়েন্টে দুইজন পর্যটক ছিনাতইয়ের শিকার হয়েছে। এভাবে অরক্ষিত থাকলে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমূখ হয়ে পড়বে। পুলিশি টহল জোরদারের মাধ্যমে সন্ধ্যার সময় সমুদ্র সৈকতে নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরী করা প্রয়োজন।
হোটেল মোটেল জোনের লাবণী পয়েন্টের একটি মোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কক্সবাজারে পর্যটক কমতে শুরু করার অন্যতম কারণ সৈকতের নিরাপত্তা। সৈকত পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তাদের কার্যক্রম কি তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তারা পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে না অন্য কিছু তা দেখার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের মোটেলে আসা প্রতিটি পর্যটকই নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষের নয়। যারা পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্বপালন না করলে আমাদের করার কিছু নেই। তবে আমরা চাই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যারা ঈদ উপলক্ষে অগ্রীম বুকিং দিচ্ছেন তারা নিরাপত্তার বিষয়টি জেনে নিচ্ছেন। তবে যে অবস্থা বিরাজ করছে এতে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যাদের তারা দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকের কি কি সমস্যা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।