স্কটল্যান্ডকে উড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করল নামিবিয়া, জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
১৯৩
বার পড়া হয়েছে
টানা দুই ম্যাচ জিতে ১১তম অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। রোববার স্কটল্যান্ডকে ১১৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৬, ২০১০ ও ২০১২ সালের পর চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল জুনিয়র টাইগাররা। অন্যদিকে এক ম্যাচ আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে স্কটল্যান্ড। কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৫৬ রান সংগ্রহ করে। জবাবে স্কটল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১৪২ রানে।বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিল; স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও সেই একই আবহ। চট্টগ্রামে ধীর গতির ব্যাটিং বাংলাদেশের স্কোরকে চূড়ায় নিয়ে যেতে পারেনি। কক্সবাজারেও সেই একই অবস্থা। প্রথম ম্যাচে ২৪০’র পর দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ১৬ রান বেশি। ‘স্পোর্টিং উইকেটে’ ৬ উইকেটের পুঁজিতে বাংলাদেশের রান ২৫৬।পুঁজি বাড়লেও বাংলাদেশের ওপেনার সাইফ হাসানের ব্যাটিং নিয়ে বেশ প্রশ্ন উঠছে? ৪৯ রান করলেও সাইফের এ রান এসেছে ১০৮ বলে। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৪৫.৩৭ প্রথম ম্যাচে সাইফের ব্যাট থেকে প্রথম রান আসে ১৪তম বলে। আজ ১৩তম বলে। প্রথম ম্যাচে প্রথম বাউন্ডারি ২১তম বলে; আজ ৩৯তম বলে। স্কটল্যান্ডের বোলাররা ভালো বোলিং করলেও হত। হাঁটু বরাবর বল অনায়াসে অফ কিংবা অনে খেলা যায়। কিন্তু সাইফ প্রায় অধিকাংশ বলই খেলছিলেন সোজা ব্যাটে। কোনো গ্যাপ খুঁজতে চাননি, পারেননি প্রতিটি বলই দিয়েছেন ফিল্ডারদের হাতে। তার অতিরিক্ত সাবধানী ব্যাটিংয়ে স্কটিশরাও তাকে যেন পেয়ে বসেছিল। শর্ট লেগ, সিলি মিড অফ, স্লিপ, গালি নিয়ে সাইফকে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন স্কটিশ অধিনায়ক নিল ফ্ল্যাক।স্কটিশ স্পিনার রায়ান ব্রাউনের ২৩তম বলে প্রথম রান বের করতে সমর্থ হন সাইফ। ব্রাউনের ৩৫ বলে মাত্র ৫ রান নিতে সমর্থ হন ডানহাতি এ ওপেনার। যেখানে ছিল ৩৩টি ডট বল সব মিলিয়ে ১০৮ বলের ইনিংসে ৭২টি ডট বল খেলেন সাইফ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ১২ ওভারই ডট চোখ যেন কপালেই উঠে যাচ্ছে।সাইফের কাব্যিক ব্যাটিংয়ের আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে চমকে দেওয়া পিনাক ঘোষ (০) ও জয়রাজ শেখ ইমন সাজঘরে। পিনাক ঘোষ সোজা বল লেগ সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউর শিকার। জয়রাজও একইভাবে সর্বনাশ ডেকে আনেন। দুজনকেই আউট করেন পেসার মোহাম্মদ গাফফার। তাদের বিদায়ের পর সাইফকে নিয়ে জুটি বাঁধেন নাজমুল হোসেন শান্ত। যেখানে ২৫ ওভারে তারা যোগ করেন ১০১ রান। সাইফের বিদায়ের পর দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব পড়ে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর। দুজন ১৪২ ওভারে করে ১০০ রান। এ সময়ে মেহেদি হাসান মিরাজ দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৫১ রানে ফিরে যান। মিরাজের ফিরে যাওয়ার পরই নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরি তোলার পথে শান্ত বিশ্বরেকর্ডও করেন। যুব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন শান্ত। বিশ্বরেকর্ড ও সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসকে ২৫৬ পর্যন্ত নিয়ে যান বাহাতি এ ব্যাটসম্যান। ১১৭ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ১১৩ রান করেন রাজশাহীর এ ক্রিকেটার। শান্তর সঙ্গে শেষ দিকে ৬ বলে ১৬ রান যোগ করেন সাঈদ সরকার।
২৫৬ রানের পুঁজি স্কটল্যান্ডের জন্যে যথেষ্ট। স্পিন নির্ভর বোলিং আক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশ পুচকে স্কটিশদের বিপক্ষে জিতবে তা অনুমান করা যাচ্ছিল। কিন্তু কত আগে স্কটিশদের গুটিয়ে দিতে পারে জুনিয়র টাইগাররা তা দেখার অপেক্ষায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমিরা। তবে এ পরীক্ষায় বাংলাদেশের থেকে এগিয় স্কটল্যান্ড। ৪৭২ ওভার পর্যন্ত মিরাজ, গাজী ও আরিফুলদের বিপেক্ষে লড়াই করেছে তারা। ১৪২ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। মিরাজবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বোলিং বিভাগের সেরা বোলার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও সালেহ আহমেদ শাওন। ৩টি করে উইকেট নেন তারা। ২টি উইকেট নেন আরিফুল ইসলাম। ১টি উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ।স্কটল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন আজিম দার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন নিল ফ্ল্যাক। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন বাংলাদেশ দলের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্ত।আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নামিবিয়া। স্কটল্যান্ড খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করল নামিবিয়া ঃ স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারানোর প্রত্যয় জানিয়েছিল নামিবিয়া। চমকে দেওয়ার প্রথম অধ্যায় রচনা করেই ফেলল আইসিসির সহযোগী দেশটি। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে নামিবিয়া উঠে গেল শেষ আটে।কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে নামিবিয়া। ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে মাত্র ১৩৬ রান করতে পেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়ায় শুরুটা ভালো না হলেও লোহান লরেন্সের দুন্দান্ত ইনিংসে উজ্জীবিত নামিবিয়ানরা জিতে গেছে ৬২ বল বাকি রেখেই।প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়েছিল নামিবিয়া। তাদের টানা দ্বিতীয় জয় আর বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় জয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সুপার লিগ কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে এই দুই দলের।নামিবিয়ার জয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছিল বোলাররা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা প্রোটিয়া ওপেনার লিয়াম স্মিথকে ফিরিয়ে দেয় প্রথম ওভারেই। উইকেট তুলে নিয়েছে তারা নিয়মিতই। এক পর্যায়ে বিব্রতকর রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল চ্যাম্পিয়নরা, ৬০ রানে হারিয়েছিল ৮ উইকেট সেখান থেকে রান কিছটা ভদ্রস্থ পর্যায়ে নিয়ে যান উইলেম লুডিক। লুথো সিপামলাকে নিয়ে নবম উইকেটে গড়েন ৫৫ রানের জুটি। যাতে সিপামলার অবদান ছিল ৫২ বলে ৪ ৪২ রান করে ফেরেন লুডিক, ৬৩ বলে অপরাজিত ১৭ সিপামলা। পুরো ৫০ ওভার খেলেও ১৩৬ দক্ষিণ আফ্রিকা।২৪ রানে ৪ উইকেট নেন মাইকেল ফল লিনজেন, ১৬ রানে ৩টি ফ্রিটজ কোয়েটজি।রান তাড়ায় প্রথম বলেই নামিবিয়া হারায় আগের ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ এসজে লফটি-ইটনকে। প্রোটিয়া বোলাররা এরপর চেষ্টা করেছেন সাধ্যমত, ৭৪ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে জাগিয়ে রেখেছিলেন সম্ভাবনা। কিন্তু লরেন্সকে হারাতে পারেনি তারাষষ্ঠ উইকেটে চার্ল ব্রিটসের সঙ্গে লরেন্সের ৫২ রানের জুটি দকে নিয়ে যায় জয়ের কাছাকাছি। পরে উইকেট পড়েছে আরও তিনটি। কিন্তু লরেন্স (৯৭ বলে ৫৮*) এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে নিয়ে গেছেন স্বপ্নের ঠিকানায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঃ ফিজিকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে ২৬২ রানের বড় জয় এনে দিতে শামার স্প্রিঙ্গার করেছেন দারুণ এক শতক। রোববার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ৩৪০ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।টেভিন ইমলাখের (৩৬) সঙ্গে ১২০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো সূচনা এনে দেন গিডরন পোপ। তবে এরপর ২০ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৭৭ বলে ১২টি চারের সাহায্যে ৭৬ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন পোপ।১৪০ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাড়ে তিনশ’ রানের কাছাকাছি যায় স্প্রিঙ্গার ও জিড গুলির দৃঢ়তায়। দুই জনে গড়েন ১৫৭ রানের বড় এক জুটি।৭৫ বলে ৬৬ রানের ভালো একটি ইনিংস খেলে ফিরে যান গুলি। শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১০৬ রান করেন স্প্রিঙ্গার। তার ৭৮ বলের ঝড়ো ইনিংসটি ১০টি চার ও ৪টি ছক্কা সমৃদ্ধ।ফিজির চাকাচাকা টিকোইসুভা ৬ উইকেট নেন ৫৯ রানে।জবাবে ২৭ ওভার ৩ বলে ৭৮ রানে অলআউট হয়ে যায় ফিজি। সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন পেনি ভুনিওয়াকা। তিনি ছাড়া দুই অঙ্কে পৌঁছান কেবল সাইমনি টুইটোঙ্গা (১২)।২৪ রানে চার উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার পোপ।গ্রুপের অন্য ম্যাচে এদিন জিম্বাবুয়েকে ১২৯ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। টানা তিন জয়ে গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছে দলটি। ‘সি’ গ্রুপ থেকে শেষ আটে তাদের সঙ্গী হওয়ার লড়াইয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে।
ইংল্যান্ড ঃ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। জ্যাক বার্নহ্যামের অপরাজিত শতকে জিম্বাবুয়েকে সহজেই ১২৯ রানে হারিয়েছে তারা। এই জয়ে গ্রুপ সেরা হিসেবে সুপার লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছে দলটি।
রোববার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ২৮৮ রান করে ইংল্যান্ড। ম্যাক্স হোল্ডেনের (৫১) সঙ্গে ড্যান লরেন্সের ৯১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভালো সূচনা এনে দেয় ইংল্যান্ডকে। আগের দুই ম্যাচে ১৭৪ ও ৫৫ রানের দুটি চমৎকার ইনিংস খেলা লরেন্স এবার ফিরেন ৫৯ রান করে। তার ৬৭ বলের ইনিংসটি গড়া ৭টি চার ও একটি ছক্কায়। ২০তম ওভারে ক্রিজে এসে শেষ পর্যন্ত ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় শতক পাওয়া বার্নহ্যাম। তার ১০৪ বলের ইনিংসটি ৬টি ছক্কা ও ৫টি চারে সাজানো। শেষের দিকে ১৬ বলে অপরাজিত ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন স্যাম কুরান। জবাবে সাকিব মাহমুদ ও ক্যালাম টেইলরের মারাত্মক বোলিংয়ে ৪৩ ওভার ৪ বলে ১৫৯ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। জেরেমি আইভস ছাড়া আর কেউ ভালো করতে না পারায় লক্ষ্যের ধারে কাছে যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৯১ রান করেন আইভস। তার ১৩২ বলের ইনিংসটি সাজানো ১২টি চারে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান আসে অতিরিক্ত থেকে। অধিনায়ক ব্রেন্ডন মাভুটা করেন ১৪ রান। ৩৯ রানে চার উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার মাহমুদ। টেইলর তিন উইকেট নেন ১৪ রানে।
‘সি’ গ্রুপ থেকে শেষ আটে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হওয়ার লড়াইয়ে আছে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।