পর্যটন মৌসুমে দৈনিক হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মূখরিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। পর্যটনের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন হলেও দ্বীপে গড়ে উঠেনি কাংখিত সেবা প্রতিষ্ঠান। কিছু কিছু সেবাকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় সেবক। মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে চিকিৎসা সেবা অন্যতম। দ্বীপবাসীর চিকিৎসা সেবার জন্য ১৯৯৫ সনে একটি হাসপাতাল গড়ে উঠলেও নেই চিকিৎসক। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য লোকবলের অভাবে এখানকার ১০ শয্যার হাসপাতালটি দীর্ঘ বছর ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে। বর্তমান সরকার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ঘোষনা দিলেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে দ্বীপের প্রায় ৯ হাজার বাসিন্দা।
তাদের নির্ভর করতে হয় কয়েকটি ফার্মেসি চিকিৎসকের কাছে। দুর্ঘটনা বা অসুস্থ হলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা অথবা আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানালেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে একটি অপারেশন থিয়েটার। চিকিৎসা সুবিধার আধুনিক সব যন্ত্রপাতিও আছে। তবে একটিবারও অপারেশন থিয়েটারের তালা খোলা হয়নি। খোলা হয়নি সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির প্যাকেটও। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে অব্যবহৃত দামি সব যন্ত্রপাতি এভাবেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বিনা চিকিৎসায় প্রতি বছর সেন্টমার্টিন দ্বীপে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরপরও কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। সম্প্রতি চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে এক প্রসূতি মহিলার ও এক শিশুর। গত ১৭ জানুয়ারি দিলদার বেগম (৩৪) নামে এক প্রসূতি মহিলার প্রসব বেদনা শুরু হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে প্রসব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে পরের দিন সকালে ট্রলারে করে টেকনাফে নিয়ে আসতে হয়েছে। সেখান থেকে কক্সবাজার নেয়ার পথে পথিমধ্যে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। অপরদিকে গত ১৮ জানুয়ারি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তানভীর নামে এক শিশুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না থাকায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের। দ্বীপবাসীরা প্রশ্ন তুলেন, সরকারি চিকিৎসক দ্বীপে পাঠালেও কেন অবস্থান করেনা। তারা কি সরকারের বেতনভূক্ত নই।
জানাগেছে, ১৯৯৫ সালে হাসপাতালটি নির্মাণের পর একজন ডাক্তারকে পোস্টিং দেওয়া হয়। এক বছরের মাথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বদলি করে নিয়ে আসা হয়। এর পর অন্য একজন ডাক্তার পাঠানো হয়। কিন্তু দ্বীপের পরিবেশে তিনি থাকতে রাজি হননি। এরপর থেকে সেন্টমার্টিন হাসপাতালটি রয়েছে ডাক্তারশূন্য।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, হাসপাতালের জন্য একটি বড় জেনারেটর দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে পুরো দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। এ জেনারেটরটি একদিনের জন্যও চালু করা হয়নি। বন্ধ থাকতে থাকতে হাসাপাতাল ভবনটিও মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপে প্রতি বছর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। এর পরও দ্বীপের একমাত্র হাসপাতালটি চালু করতে কোনো উদ্যোগ নেই। তিনি দ্বীপবাসীর পক্ষথেকে একমাত্র হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসক পোস্টিং দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান।