মুসলিম নারীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। অনেক দেশেই হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। আবার কিছু দেশে হিজাব পরলে জরিমানা দিতে হয়। হালে সুইজারল্যান্ডের বিশেষ স্থানগুলোতে হিজাব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাবিষয়ক বিলও আলোচিত।
সুইস
ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রথম দেশ হচ্ছে সুইস, যেখানে ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানে মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ। এই নিয়মটি রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও প্রশাসনিক অধিদপ্তরগুলোর পাশাপাশি গণপরিবহন ও পৌরসভা ভবনগুলোতে প্রযোজ্য।
২০১৪ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত কর্তৃক অনুমোদিত এই আইনটি লংঘন করলে দেশটির হিসেবে দেড়শ ইউরো পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
২০০৪ সালের আইন অনুযায়ী বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নির্দেশ করে- এমন যে কোনো পোশাক পাবলিক স্কুলগুলোতে পড়া বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নিষিদ্ধ। দেশটির সরকারি কর্মচারীরা সাধারণভাবে “সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার” প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতে গিয়ে হিজাব পড়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যান।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়াতে উন্মুক্ত স্থানে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে দেশটির দেড়শ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা আরোপিত হয়েছে।
তবে অস্ট্রেলিয়ার সাংবিধানিক আদালত ২০২০ সালের শেষের দিকে এমন একটি আইনকে প্রত্যাবর্তন করেছে। যেটি পাস হয়েছিল ২০১৯ সালে এবং নার্সারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের হিজাব পড়তে বাধা প্রদান করেছিল।
বেলজিয়াম
বেলজিয়ামে ২০১১ সালের একটি আইন পাস করে বলা হয়েছিল যে উন্মুক্ত স্থানে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা ব্যক্তির চেহারাকে আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে রাখে। তবে স্বাস্থ্যগত কোনো কারণ থাকলে তা ভিন্ন কথা। এই আইন লঙ্ঘন করলে ১৫ থেকে ২০ ইউরো জরিমানা। পাশাপাশি রয়েছে ৭ দিনের জেল।
বুলগেরিয়া
বুলগেরিয়ায় ২০১৬ সালের একটি আইন পাস করে বলা হয়েছিল যে উন্মুক্ত স্থানে এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যা ব্যক্তির চেহারাকে আংশিক বা পুরোপুরি ঢেকে রাখে। এই আইন লংঘন করলে দুইশ লিভা তথা প্রায় একশত দুই ইউরো পরিমাণ জরিমানা আদায় করতে হয়।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কেও রয়েছে উন্মুক্ত স্থানে হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। ২০১৮ সালের আগস্টে করা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের জন্য রাখা হয়েছে এক হাজার ক্রোনার জরিমানা। যা প্রায় ১৩০ ইউরো পরিমাণ। বারবার আইন লংঘন করলে এটি পৌঁছে যেতে পারে ১০ হাজার ক্রোনার পর্যন্ত।
জার্মানি
অন্য অন্যদিকে জার্মানিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ না হলেও রয়েছে কাছাকাছি আইন। সেখানে উন্মুক্ত স্থানে হিজাব পড়তে কোনো বাধা না থাকলেও তদন্তের সময় মুখ খুলতে বাধ্য করা হয় মুসলিম নারীদেরকে। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জার্মানিতে রয়েছে একেক রাজ্যে একেক নিয়ম। কোনো রাজ্যে হিজাবকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আবার কোনো রাজ্যে বৈধ।
২০১৭ সালে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত ওই দেশের নারী শিক্ষকদের উপরে হিজাব সংক্রান্ত একটি নিয়মকে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এর সুন্দরভাবে পরিচালনার স্বার্থে করা হয়েছে মত দিয়েছে।
নেদারল্যান্ড
নেদারল্যান্ডে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে সে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও গণপরিবহনে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করেছে। এই আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে একসঙ্গে দেড়শ ইউরো জরিমানা।
নরওয়ে
নরওয়েতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রয়েছে একই রকমের নিয়ম। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এই নিয়মটি চালু হয়।
ইতালি
ইতালির দুটি অঞ্চল লোম্বার্ডি এবং ভেনেটোকে হাসপাতাল ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পুরো মুখে ওড়না পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়গুলো নিকাব নিষিদ্ধ করেছে যদি এটি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী হয় বা এটি পরীক্ষার হলে বা কোনো ক্রীড়া ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে অথবা এটি যদি এটি স্বাস্থ্যবিধি বিধি লঙ্ঘন করে। অন্যথায় হিজাব পড়ার সর্বত্র অনুমোদন রয়েছে।
আরবি সংবাদমাধ্যম আল-হাররা অবলম্বনে