ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আর কয়েক মুহূর্ত পরে মেরে ফেলা হবে তাঁকে। ইশরাত আখন্দের পাশে দাঁড়িয়ে দুই জঙ্গি তখনও নিজেদের মধ্যে মৃদু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। নাম জানতে চেয়েছিল তারা। ‘ইশরাত’ শুনে এক জন বলেছিল, ‘‘ও বাঁচার জন্য ধর্মের নাম (মুসলিম নাম) নিচ্ছে। মুসলমান হলে হিজাব পরেনি কেন? মাথায় কাপড় নেই কেন?’’
হিজাব পরার অভ্যেসটা ছোট থেকেই ছিল না ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন প্রধান ইশরাতের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনীর উচ্চশিক্ষা অস্ট্রেলিয়ায়। ওই আর্ট গ্যালারি ছাড়াও কাজ করেছেন বিভিন্ন সংস্থার উচ্চ পদে। নিজে শিল্পী। আবার মিউজিক ভিডিওয় অভিনয়ও করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কফি খেতে গিয়েছিলেন গুলশনের হোলি আর্টিজেন বেকারিতে।
জঙ্গিদের নাগাল এড়িয়ে পালানো ওই কাফের এক কর্মী খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন ইশরাতের শেষ মুহূর্তগুলো।
তিনিই জানিয়েছেন, ইশরাতের দিকে এগিয়ে আসা জঙ্গির প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘‘তোমার মাথায় হিজাব নেই কেন?’’
ইশরাত তাকে জানান, তিনি বাংলাদেশেরই নাগরিক। তবে কোনও দিনই হিজাব পরেননি। এর পরেই তাঁর নাম জানতে চাওয়া এবং তা নিয়ে দুই জঙ্গির আলোচনা। মিনিটখানেকের একটু বেশি সময় ধরে ব্যাপারটা গড়ায়। এই সময়ে তৃতীয় এক জঙ্গি এসে বলে, ‘‘আমাদের হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই।’’
জঙ্গির ধারালো অস্ত্র নেমে আসে তখনই। ইশরাত পড়ে থাকেন কফির কাপে মুখ থুবড়ে।
তালিকা বলছে, মাঝবয়সি ইশরাত-সহ নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোট তিন জন বাংলাদেশি। অন্য দু’জন তুলনায় নবীন।
একজন ট্রান্সকম শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন। প্রথম সারির একটি দৈনিক রয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠীর।
তৃতীয় নাম অন্য এলিগ্যান্ট শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের মেয়ে অবিন্তা কবীরের। আমেরিকা থেকে এসেছিলেন ইদের ছুটিতে। সঙ্গে দেহরক্ষীও ছিলেন। রক্ষী বেঁচে গেলেও রক্ষা পাননি অবিন্তা।
মোক্ষম সময়ে এই মানুষটিকেই প্রমাণ দিতে হল নিজের নাগরিকত্ব, ধর্মবিশ্বাসের। ‘ডাহা ফেল’ ইশরাত খেসারত দিলেন নিজের জীবনটাই!