হিমছড়ির পেচাঁরদ্বীপে নির্মিত হয়েছে বিশ্বের বড় কচ্ছপ ভাস্কর্য
ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
আপডেট সময়
শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬
৪৩২
বার পড়া হয়েছে
রামু উপজেলার পেচাঁরদ্বীপে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল কচ্ছপের ভাস্কর্য্য। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব চেয়ে অন্যতম বড় ভাস্কর্য হচ্ছে এ কচ্ছপ ভাস্কর্য্য। দেশি-বিদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষনের পাশাপাশি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পর্যটন শিল্প বিকাশ ও প্রসারে নতুন মাত্রায় যুক্ত হওয়া কচ্ছপ ভাস্কর্য্যটি নিঃ সন্দেহে পৃথিবী একমাত্র জলজ প্রাণির বড় ভাস্কর হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। দৈর্ঘ্য-৫৭ ফুট, প্রস্থ-৩৫ফুট ও উচ্চতা-১৮ফুট এ ভাস্করটি মারমেইট ইকো ট্যুরিজম বীচ রির্সোস শৈল্পিক কারুকাজের মাধ্যমে তৈরী করেছে। এই ভাস্কর্য্য দেখলে যে কারোর কচ্ছপ-খরগোশের পুরানো রূপকথার গল্প স্মরণ করিয়ে দেয়।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের রেজু ব্রিজের উত্তর পার্শ্বে একটি পরিচিতি জায়গার নাম পেচাঁরদ্বীপ। বিটিশ নৌবাহিনীর সদস্যরা ১৯৪৬ সালে সমুদ্র হয়ে জাহাজ দিয়ে মিয়ানমারের রেগুণে যাওয়ার পথে বিশাল এ দ্বীপ আবিস্কার করে। উক্ত দ্বীপে কয়েকদিন অবস্থান নিয়ে সমুদ্র ঘেষা বড় পাহাড় গুলো ঘুরে বেড়াই ওই জাহাজের নাবিকরা। জাহাজ ক্যাপ্টেন মিঃ পেচাং নামের এই দ্বীপটি নাম করণ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় অধিবাসিরা কালের আবর্তে উক্ত দ্বীপকে স্থানীয় ভাষায় পেচাঁরদ্বীপ হিসাবে পরিচিতি হয়।
পেচাঁরদ্বীপ এলাকা ইউপি সদস্য সোলতান আহমদ বলেন, বিটিশ আমলে উপকূলীয় এলাকার লোকজন অভাব-অনটনের কারনে সাগরপথে পেচাঁরদ্বীপ হয়ে পাকিস্তানে করাচিতে ফাড়ি জমায়। পশ্চিমে সাগর ও পুর্বে বিশাল আকৃতির সবুজ ঘেরা পাহাড় তার মাঝে এই পেচাঁরদ্বীপটি দেখতে খুবই দৃষ্টি নন্দন। পরবর্তীতে করাচিতে চলে যাওয়া লোকজন বংশাক্রমে ধীরে ধীরে পেচাঁর দ্বীপে আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এ এলাকায় লোকালয় গড়ে উঠে। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গনে দ্বীপটি হারিয়ে যেতে বসেছিল।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা মোহাম্মদ হোছন প্রকাশ লাল মাতু জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হলে পেচাঁরদ্বীপের কদর বাড়তে থাকে। দেশি-বিদেশী পর্যটকরা এ দ্বীপের নাম করণ নিয়ে নানান কৌতহলী সহ আগ্রহ দেখা দেয়।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পেচাঁরদ্বীপকে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বেসরকারী পর্যায়ে নানান উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপের আদলে ওই দ্বীপে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। তিনি ৭ একর এলাকা জুড়ে গাছ-গাছালি ও ছণ-বাঁশ দিয়ে প্রাকৃতিক ভাবে মারমেইট নামক ইকো ট্যুরিজম স্থাপন করে। সম্পূর্ণ পর্যটন ও পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় এই ইকো ট্যুরিজম দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে দিনদিন আগ্রহ বাড়তে থাকে। পেচাঁরদ্বীপে গড়ে উঠা ওই ইকো ট্যুরিজমের অভ্যান্তরে এ বিশাল কচ্ছপ ভাস্কর নির্মিত করে।
মারমেইট ইকো ট্যুরিজম ও বীচ রির্সোস এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাফুজুর রহমান বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল কচ্ছপ ভাস্কর্য্য হচ্ছে এটি। দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশী পর্যটকদের এ বিরাট কচ্ছপ ভাস্কর্য্য দেখার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে আরো পরিচিতি লাভ কবরে।
মারমেইট বীচ রির্সোসের ম্যারকেটিং অফিসার রেকসি জানান, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কচ্ছপ ভাস্কর্য্যটি গেল বছর পর্যটকের আকর্ষণের জন্য পেচাঁরদ্বীপে তৈরী করা হয়েছে। কচ্ছপ ভাস্করটি আয়তন হচ্ছে দৈর্ঘ্য-৫৭ ফুট, প্রস্থ-৩৫ফুট ও উচ্চতা-১৮ফুট। তিনি বলেন, এ বিশাল আকৃতির জলজ ভাস্করটি তৈরীর প্রধান লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে কচ্ছপকে মাটির উপরে দেখা, এবং কচ্ছপ সংরক্ষণের প্রতি গণসচেতনতা সৃষ্টি করা। তিনি আরো বলেন, সাধারণত কচ্ছপ জলজ প্রাণি হওয়ায় অনেকেই দেখা সুযোগ হয়না। আবার অনেকেই এই প্রাণিকে হত্যা করে। মূলতঃ কচ্ছপকে মানুষের হাত থেকে বাঁচানো, দেখা ও জানার জন্য এই ভাস্করটি তৈরী করা হয়েছে। বিশেষ করে এটি সকলের কাছে পুরানো দিনের কচ্ছপ-খরগোশের রূপকথার গল্প নতুন করে মনে করে দেবে।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানা যায়, দেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রণি আহমদের নির্দেশনা ও গ্রাফিক্স অংকনে মাধ্যমে ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ বিশ্বের বিরাট কচ্ছপ ভাস্করটি পেচাঁরদ্বীপে নির্মিত করে।