কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের শতাধিক বসতি। উদ্যানের প্রায় ৮৫ হেক্টর পাহাড়ি ও ঢালুতে বনায়ন প্রায় শূন্য। জলবায়ু পরির্বতনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় এই বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও গত দু’বছর ধরে চলে গেছে রোহিঙ্গাদের দখলে। আর তা নিয়ন্ত্রন করছে এক শ্রেণির প্রভাবশালীরা। বর্তমানে বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রাণীও হুমকির মূখে পড়েছে।
বন বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পূর্বে হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের প্রায় ৮৫ হেক্টর পাহাড়ী এলাকায় সৃজিত করা হয়েছে গামার, কদম, আকাশমনি, হাইব্রীড, বহেরা ও আমলকির বাগান। স্বল্প মেয়াদী এই বাগান করা হয়েছে ২০১১-১২ সনে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় এই বনায়ন করা হয়। বনায়ন দেখভাল করছেন দক্ষিণ বন বিভাগের কক্সবাজার সদর রেঞ্জের কলাতলী বিট।
উদ্যানে বসবাসকারি জালাল আহমদ বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে তিনি মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে কক্সবাজার আসে। মিয়ানমারের মংডু শীতাক্ষেপানু এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে তিনি। আগে শহরের পাহাড়তলী এলাকায় থাকলে ও গত দু’বছর ধরে ঘর তৈরি করে হিমছড়ির উদ্যানে রয়েছে। তার মতো আরও ১১০ পরিবারের প্রায় ছয় শতাধিক লোক বসতি তৈরি করে বনায়নের জায়গায় বসবাস করছে। তারা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক।
বসবাসকারী আবু বক্কর বলেন, এখানে বসবাস করতে তাদের কোনো টাকা দিতে হয় না। আর জমিও কিনতে হয়নি। কলাতলী এলাকার শফি মাঝি, ছিদ্দিক, খালেক, হাসান ফকির ও বাহারছড়া এলাকার গিয়াস উদ্দিন এই এলাকাটি দেখা শোনা করেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এই উদ্যানের জায়গাটি। মাঝে মধ্যে বন বিভাগের লোকজন এসে ঘুরে যায়। কাউকে কিছুই বলে না। তিনি বলেন, গাছপালার উপর নির্ভর করে তাদের চলতে হয়। গাছের ডালপাল কেটে বাজারেও বিক্রি করা হয়। অনেক চোরের দল রাতে গাছ গুলো কেটে নিয়ে যায়। আগে বন্যহাতি আসতো, কিন্তু এখন দেখা যায় না।
কক্সবাজার কলাতলী বিট অফিসার তৌহিদুল রহমান জানান, অনেক আগে থেকেই বনায়নের জায়গায় তাদের বসবাস। মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ হওয়ায় সৈকতের আশপাশের অনেক লোক ওখানে বসবাস করছে। কিন্তু এসব লোকজন রোহিঙ্গা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বনায়নের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বলে তিনি জানান।
কক্সবাজার সদর রেঞ্জ অফিসার তাপস কুমার দেব জানান, বনভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বসতি উচ্ছেদের পরিকল্পনা রয়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) দেওয়ান আব্দুল হাই মোঃ আজাদ জানান, একশ্রেণির ভূমিদস্যু সরকারি বনভূমি দখল করতে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। তাছাড়া হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানে রোহিঙ্গা বসবাসের বিষয়টি আমার জানা নেয়। বিষয়টি আরও খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।