গভীর সমুদ্র বন্দরকে হুমকিতে রেখে মহেশখালীর মাতারবাড়িতেই হচ্ছে এলএনজি প্ল্যান্ট। এ লক্ষ্যে আজ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি মাঠ জরিপের জন্য মাতারবাড়িতে যাচ্ছে। এর আগে এলএনজি প্ল্যান্টের জন্য প্রস্তাবিত দুটি জায়গা গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য হুমকি হতে পারে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে তিন দফায় লিখিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল। মাঠ জরিপের আগে বিদ্যুৎ জ্বাালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন এই এলএনজি প্ল্যান্ট স’াপনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গতকাল শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের স’ানীয় এক হোটেলে একটি সমন্বয় সভাও করেছেন।
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মহেশখালীর সোনাদিয়ায় ডেনমার্কের অর্থায়নে ৫৫ হাজার কোটি টাকায় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর স’াপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন’ সোনাদিয়ার প্রবেশমুখে এলএনজি প্ল্যান্টের জন্য স’াপন করা হচ্ছে এফএসআরইউ (ঋষড়ধঃরহম ঝঃড়ৎধমব ধহফ জবমধংরভরপধঃরড়হ টহরঃ) ইউনিট। ২১ ডিগ্রি ৩৪ মিনিট ২৫ সেকেন্ড (উত্তর) ও ৯১ ডিগ্রি ৪৯ মিনিট শূন্য ৮ সেকেন্ড (পূর্ব) কিংবা ২১ ডিগ্রি ৩২ মিনিট শূন্য ১ সেকেন্ড ও ৯১ ডিগ্রি ৪৮ মিনিট শূন্য ৭ সেকেন্ড (পূর্ব) এই দুটি স’ানের যেকোনো একটিতে এফএসআরইউ স’াপন করতে চাচ্ছে এলএনজি প্ল্যান্ট বাস্তবায়নকারী সংস’া পেট্রোবাংলা। আর যে জায়গায় এফএসআরইউ ইউনিট স’াপন করা হচ্ছে তা প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর সোনাদিয়ার জন্য সাংঘর্ষিক হবে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এ পর্যন্ত তিন দফায় মতামত পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে, গত বছরের ডিসেম্বরে ও গত সপ্তাহে তিন দফায় একই সুপারিশ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ গত সপ্তাহে সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেছিলেন, ‘উন্নয়নের জন্য গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে এলএনজি প্ল্যান্ট ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পও
প্রয়োজন। আর যেহেতু এলএনজি প্ল্যান্টটি গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রবেশমুখে তাই আমরা বলেছি আরেকটু উত্তর দিকে সরে স’াপন করার জন্য।’
কিন’ এলএনজি প্ল্যান্ট বাস্তবায়নকারী সংস’া বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় উত্তর দিকে না সরে নিজেদের প্রস্তাবিত দুটি স’ানের একটিতে করতে চাচ্ছে। কিন’ কেন তাদের এই অবস’ান এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চীফ হাইড্রোগ্রাফার লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মোহাম্মদ মনজুর-উল-করিম বলেন,‘মাতারবাড়ি পয়েন্টে পানির গভীরতা ২০ মিটার। সেজন্যই জাইকা এই এলাকাটি গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য সুপারিশ করেছিল। এই স’ান দিয়ে জাহাজগুলো মহেশখালী চ্যানেলে প্রবেশ করবে। অপরদিকে মাতারবাড়ির একটু উত্তর দিকে পানির গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম। তাই হয়তো তারা (পেট্রোবাংলা) এই জায়গাটি বেছে নিতে চাচ্ছে। কিন’ এই স’ানটি ভবিষ্যতের গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য প্রবেশমুখ হিসেবে ব্যবহৃত হবে, এতে জাহাজ চলাচলে কিছুটা বাধার সম্মুখীন হতে পারে।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাঠ জরিপে অংশ নেয়া একজন প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাবিত জায়গায় এলএনজি প্ল্যান্ট স’াপন করতে চাচ্ছে। ফিল্ড ভিজিটে পেট্রোবাংলার টিমের সাথে আলোচনা করে জানা যাবে তাদের জন্য পানির গভীরতা কত প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রবেশমুখ ছাড়া অন্যকোনো স’ানে এলএনজি প্ল্যান্ট স’াপন করা যায় কিনা তাও আলোচনায় উঠে আসবে।
এদিকে এফএসআরইউ সম্পর্কে জানা যায়, এটি একটি জাহাজ যা সমুদ্রবক্ষে অপরাপর যেকোনো জাহাজের মতো মুরিং করা থাকবে। উক্ত এফএসআরইউ তে অপর একটি এলএনজি জাহাজ হতে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। সাব সি পাইপ লাইনের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তা জাহাজ থেকে টার্মিনালে আনা হবে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা মাতারবাড়িতে এধরনের একটি বড় জাহাজ অবস’ান করায় সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরে জাহাজ প্রবেশ কিংবা বের হওয়ার সময় সমস্যা হতে পারে। এছাড়া আঙ্কটাড এর গাইডলাইন অনুযায়ী, এলএনজি প্ল্যান্টের ৩০০ বর্গ মিটারের মধ্যে কোনো জাহাজ থাকতে পারবে না।
উল্লেখ্য, এলএনজি টার্মিনালের জন্য পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি এফএসআরইউ স’াপনের কার্যক্রম ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সমস্যা সমাধান হওয়ার কথা রয়েছে।