জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে ‘বর্বর কায়দায়’ হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘মুক্তবুদ্ধির’ চর্চা করে বাংলাদেশে হুমকিতে থাকা ব্লগারদের আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এপি এ খবর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপ মুখপাত্র মার্ক টোনার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হুমকি এবং জীবন হানির ঝুঁকির মধ্যে থাকা নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্লগারের জন্য এটি একটি বিকল্প হতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় আছে।
সম্প্রতি ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম- ইউএসসিআইআরএফ একের পর এক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার, লেখকদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কাছে সুপারিশ করে।
ওই চিঠির প্রসঙ্গ তুলেই এক সাংবাদিক টোনারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন- ব্লগারদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি না।
টোনার বলেন, বিষয়টি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের আওতাধীন। এ বিষয়ে তার হাতে খুব বেশি তথ্য নেই।
ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ের শুরুতেই বাংলাদেশে নাজিম হত্যাকাণ্ডের বিষয় উল্লেখ করে টোনার বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। নাজিম উদ্দিন জানতেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসও দেখিয়েছে যে, সহিংসতা বাংলাদেশের মুক্ত ও স্বাধীন মতকে হারাতে পারবে না। নির্মম হত্যাকাণ্ডবিরোধী বাংলাদেশি জনগণের পাশে আমরা আছি এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষায় একটি সহনশীল ও অংশগ্রহণমূলক সমাজের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে।
এই হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘গুরুতর ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করে টোনার বলেন, আমরা নাজিমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বাংলাদেশে যারা সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মার্কিন সরকারের কাছে বাংলাদেশী লেখকদের মানবিক আশ্রয় প্রদানের আহ্বান জানিয়েছিল।
নাজিমকে হত্যার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশী ব্লগারদের আশ্রয় দিতে মার্কিন সরকারের কাছে ফের আবেদন জানায়।
বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়, নাজিমুদ্দিনকে নৃশংস উপায়ে হত্যার ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হচ্ছে।
কয়েক ডজন ব্লগার জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কিংবা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে অ্যামনেস্টি বলে, ধর্মনিরপেক্ষ মতামত ও লেখালেখির কারণে ২০১৫ সালে কমপক্ষে চারজন ব্লগার ও একজন প্রকাশককে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে এখনো বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি।
পেন আমেরিকার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নাজিম উদ্দিনের হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। এ ঘটনা মুক্তচিন্তার মানুষ যে ভীতিকর নিষ্ঠুর পরিস্থিতির মধ্যে আছে, সেটাই নির্দেশ করে।
পেন আমেরিকার স্বাধীন মত প্রকাশ বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক কারিন কার্লেকার ঝুঁকিতে থাকা মুক্তচিন্তার মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুর থানাধীন লক্ষ্মীবাজারের ঋষিকেশ দাস লেনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পরই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সমালোচনা ঝড় ওঠে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও সামাদ হত্যার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে।