নিউজ ডেস্ক
ডেইলি কক্সবাজার :
একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সিমকার্ডের মালিকানা ২০টির বদলে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরকারকে বড় আকারে সিম পুনর্নিবন্ধনে যেতে হচ্ছে। স্বভাবতই লাখ লাখ লোক আবার ভোগান্তির শিকার হবেন।
মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিমকার্ড নিবন্ধনের সংখ্যা ২০ থেকে পাঁচটিতে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এখন দেশের বাইরে। তাই এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার অভিমত জানা যায়নি।
গতকাল বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী সমকালকে জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রি-পেইড গ্রাহকরা একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে পাঁচটির বেশি সিমকার্ড রাখতে পারবেন না। কারও বেশি সিমকার্ড নিবন্ধন করা থাকলে সেগুলো অন্য কারও নামে নিবন্ধন করতে হবে। মোবাইল অপারেটরদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে নতুন করে বড় আকারে সিমকার্ড নিবন্ধনে যেতে হবে তাদের।
সদ্যসমাপ্ত পুনর্নিবন্ধনে অসংখ্য গ্রাহক পরিবারভুক্ত সবার সিমকার্ড পরিবারপ্রধানের কিংবা কর্মক্ষম একজনের নামে নিবন্ধন করেছেন। অনেকে স্মার্টফোন, ট্যাব, মডেম এমনকি স্মার্টওয়াচ কিংবা গিয়ারের জন্য একাধিক সিমকার্ড ব্যবহার করছেন। ফলে তাদের সিমকার্ড সচল রাখতে হলে সেগুলো একাধিক ব্যক্তির নামে নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব জানান, যাদের নামে পাঁচটির বেশি প্রি-পেইড সিমকার্ড নিবন্ধিত আছে, তাদের এসএমএস পাঠিয়ে পাঁচটি রেখে বাকি সিমগুলো ছেড়ে দিতে বলা হবে। কেউ তা সচল রাখতে চাইলে পাঁচটির কম সিম নিবন্ধিত আছে এমন অন্য কোনো পরিবারের সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে সেগুলো নিবন্ধন করতে হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘নতুন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত কড়াকড়িভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে পুরনো গ্রাহকরা পাঁচটি সিমকার্ডের মালিকানা রেখে বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব নূরুল কবীর বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে অ্যামটবে প্রতিনিধিত্ব করা দেশের অন্যতম বৃহৎ মোবাইল অপারেটরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘এর ফলে নতুন করে আবারও বড় সংখ্যায় সিমকার্ড নিবন্ধন করতে হবে। কারণ, পাঁচটির বেশি সিমকার্ড আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা লাখ লাখ।’
তিনি বলেন, ‘একজনের নামে সিমকার্ড ২০টি থেকে কমিয়ে পাঁচটি করা হলে সেটা গ্রাহকের পরিচয় নির্ধারণে বাড়তি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। এতে পাঁচটির বেশি সিমকার্ড নিবন্ধন করা গ্রাহকরা তার সিমকার্ড সচল রাখতে তৃতীয় কারও নামে নিবন্ধন করতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গ্রাহক পরিচয় নির্ধারণ এখনকার চেয়ে অনেক জটিল হয়ে পড়বে।’
লার্ন এশিয়ার সিনিয়র ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত পরিবার ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতার কারণে অনেক পরিবারেই সব সদস্যের সিমকার্ড নিবন্ধন করা হয়েছে একজনের নামে।
ফলে সরকার ২০টি থেকে সিমকার্ডের মালিকানা পাঁচটিতে নামিয়ে আনলে প্রকৃতপক্ষে প্রায় প্রত্যেককেই নতুন করে সিমকার্ড নিবন্ধনে যেতে হবে। মাত্র এক মাস আগে সিমকার্ড পুনর্নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর আবারও প্রতিটি পরিবারকে যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই নতুন করে সিমকার্ড নিবন্ধনে বাধ্য করা অবশ্যই হটকারী সিদ্ধান্ত।’ তিনি জানান, সরকারের উচিত হবে বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
এ ব্যাপারে কয়েকজন গ্রাহকের মতামত জানতে চাওয়া হলে তারা প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, ‘সরকারের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা কেন?’ তারা বলেন, ‘সরকার তো বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যাচাই করেই একজনের অধীনে ২০টি সিমকার্ড রাখার সুযোগ দিয়েছে। তাহলে এখন সেটা পাঁচটিতে নামিয়ে আনার যৌক্তিকতা কী?’