স্বাগত ২০১৬, বিদায় ২০১৫। গ্রেগরিয়ান হিসাবে আজ নতুন বছর। সদ্যসমাপ্ত বছরে ব্যর্থতা যেমন ছিল, সাফল্যও কম ছিল না। সব সাফল্য-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে আমাদের নতুন বছরে যাত্রা আরো সুন্দর হোক, সফল হোক।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে ২০১৫ সাল শুরু হলেও বছরের বেশির ভাগ সময় মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিগত বছরটিতে এক ধরনের স্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয় বাড়ায় দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের স্তরে ওঠে। নিজস্ব অর্থেই পদ্মা সেতুর মূল নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ছিল মাইলফলক বিষয়। আরো বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম থাকায় মূল্যস্ফীতি বেপরোয়া হতে পারেনি। বছরের শেষে এসে রপ্তানি আয়ে লাগে স্বস্তির হাওয়া। তবে বিনিয়োগ পরিবেশ ছিল যথারীতি স্থবির। ব্যাংক টাকা নিয়ে বসে থাকলেও আগ্রহ দেখাননি বেসরকারি উদ্যোক্তারা।
বিনিয়োগের পরিবেশ অনুকূল নয়—এ কথা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেমন বলছেন, বিভিন্ন বিদেশি প্রতিবেদনেও তা উঠে এসেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জমিসহ অবকাঠামোগত বাধাগুলো দূর করতে হবে। বিনিয়োগের পালে হাওয়া লাগছে না বলে বাড়ছে না কর্মসংস্থানও। বেকারত্বের সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধপ্রবণতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণেও অর্থনীতির চাকাটা গতিশীল হওয়া প্রয়োজন।
জঙ্গিবাদের আতঙ্ক গত বছর সারা বিশ্বকে তাড়া করেছে। বাংলাদেশেও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়ার জোর চেষ্টা করেছে। প্রতিরোধের চেষ্টা আমাদের আছে। তবে তা সাঁড়াশি করতে হবে। শুধু জঙ্গিগোষ্ঠী নয়, তাদের মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করতে হবে। শুরুর সময়টা বাদ দিলে গত বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। পৌর নির্বাচন বা অন্য কোনো ইস্যু সামনে নিয়ে এসে কোনো মহল যেন এ স্থিতিশীলতা নষ্ট না করে।
জাতিসংঘের এমডিজি বা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। গত বছর এমডিজি শেষ হয়। এই ধারাবাহিকতায় নেওয়া হয় টেকসই উন্নয়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা—সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি)। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। টেকসই অর্থনীতি, টেকসই সমাজ ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে এসডিজির মূল উদ্দেশ্য। নিঃসন্দেহে এটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এর মোকাবিলায় আমাদের অঙ্গীকার থাকলেও প্রস্তুতিতে তোড়জোড় নেই। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণের স্বার্থে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে দুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে।
পৌর নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মুহূর্তে দেশে ইতিবাচক রাজনৈতিক আবহ বিরাজ করছে। এ পরিবেশ ধরে রাখাই শুধু নয়, নতুন বছরে একে আরো জোরদার করতে হবে। চলতি সপ্তাহেই বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার দুই বছর পূর্তি হচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদের মধ্যে দুই বছর কম সময় নয়। তাই ক্ষমতাসীন দলকে অবশ্যই হিসাব করতে হবে প্রতিশ্রুতির কতখানি তারা পূরণ করতে পেরেছে। বিগত জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল—এ জাতীয় অজুহাত তুলে নতুন করে সহিংসতা-আন্দোলনও জাতি প্রত্যাশা করে না।
পুরনো বেদনা ও ব্যর্থতা পেছনে ফেলে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে আমরা নতুন প্রত্যয়ে এগোব। আমাদের পাঠক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।