গত ২ বছরে অন্তত ২৩৪ শিশুকে অপহরণ ও নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা এ চিত্রকে রোমহর্ষক ও আশঙ্কাজনক বলে অভিহিত করেছেন। তারা মনে করেন, এর জন্য দায়ী পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়া এবং সামাজিক অবক্ষয় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জে অপহরণের ৫ দিন পর মায়ের মামা বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা আবারো নাড়া দিল সমাজকে। আবারো আলোচনায় এলো অপহরণ ও নির্যাতনের পর শিশু অপহরণের একের পর এক ঘটনা। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ মাসে এ ধরনের ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৩৪ শিশুর। প্রায় সব শিশু নৃশংসতার শিকার হয়েছে নিকট আত্মীয়ের হাতে।
পরিসংখ্যান বলছে, শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাবমতে, গত ৪ বছরে ১ হাজার ১০০ শিশুহত্যা, ১ হাজার শিশু ধর্ষণ এবং প্রায় ৫০০ শিশু অপহরণের শিকার হয়েছে। ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২ বছরে অর্ধশত শিশু খুন হয়েছে মা-বাবা বা স্বজনদের হাতে। সমাজকর্মী, মনোবিজ্ঞানী ও অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে যে অবক্ষয় ঘটছে তারই প্রভাবে শিশুর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে নৃশংসতার মাত্রা বাড়ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এবং সহজে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে বা অন্য কোনো প্রতিহিংসা মেটাতে শিশুদের বেছে নেয়া হচ্ছে। পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ‘দুর্বল’ শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৯০ শিশুকে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৩৩, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩টি বেশি। এ বছরের প্রথম মাসেই নৃশংসতায় মৃত্যু হয়েছে ১১ শিশুর।
ডিপার্টমেন্ট অব ক্রিমিনলজির চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বলেন, শিশুদের যেহেতু কোনো ক্ষমতা নেই তাই শিশুরাই ভিকটিম বেশি হচ্ছে। একজন নারী পুরুষের তুলনায় বেশি অত্যাচারিত হচ্ছে। শিশুদেরকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব তেমনি সামাজিক সংগঠনগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। সমাজে যদি পারিবারিক মূল্যবোধ না থাকে, পরিবার যদি তাকে যথাযথ নিরাপত্তা না দিতে পারে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে বিকল্প ভাবনা ভাবতে হবে।
পাশাপাশি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল মনে করেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিও শিশু হত্যার জন্য দায়ী। আর তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীও এর দায় এড়াতে পারে না।
তারা দুজনই শিশুদের বাঁচাতে কঠোর আইনের পাশাপাশি তা কার্যকর করার উপর জোর দেন।