নারীর প্রতি সহিংসতামূলক এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত পোস্টের বিষয়ে অভিযোগ পেলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সাড়া দেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় এ মাধ্যমের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নিয়ে কোনো চুক্তি না হলেও আশ্বাস পাওয়া গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে তাঁর নিজ দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তারানা হালিম বলেন, বাংলাদেশের অভিযোগ বা অনুরোধ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণ ছাড়াও সব ধরনের সাইবার হুমকি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ফেসবুক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সব ধরনের অনুরোধের ক্ষেত্রে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম সময়ের মধ্যে সাড়া দেবে। অর্থাৎ নারীর প্রতি সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ইউআরএল সরবরাহ করলে সে বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা কী ব্যবস্থা নিলেন বা তাদের কী মতামত তা জানাবেন। এ জন্য নির্দিষ্ট মুখপাত্রের মাধ্যমে ফেসবুকের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগের ক্ষেত্রে সাড়া পাওয়া গেছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকের অ্যাডমিন স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের অ্যাডমিনগুলো দৈনন্দিন কাজ ও প্রচার ছাড়া আর কিছু করে না। এ ক্ষেত্রে এ অ্যাডমিন স্থাপন ফলপ্রসূ হবে না। এটা ছাড়াই বাংলাদেশ যাতে লাভবান হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে ফেসবুক। বাংলাদেশ যে উদ্দেশ্যে অ্যাডমিন স্থাপন করতে চেয়েছে, সেসব কাজ সম্পর্কে অভিযোগ পেলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অ্যাডমিন স্থাপন না করেও তার চেয়ে কার্যকর ও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে।
তারানা হালিম আরও বলেন, অ্যাডমিন স্থাপনের বিষয়টি একেবারে নাকচও করে দেয়নি তারা। বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজন হলে অ্যাডমিন স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করবে ফেসবুক।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ের দিন (গত বছরের ১৮ নভেম্বর) নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ফেসবুকসহ ইন্টারনেট যোগাযোগের বেশ কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সরকার। এর ২২ দিন পর গত ১০ ডিসেম্বর ফেসবুক পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
এর মধ্যে গত ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন প্রতিমন্ত্রী। তাদের কাছ থেকে সাড়া পেয়ে ৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেসবুক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের তিন মন্ত্রী। এরই ধারাবাহিকতায় সিঙ্গাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন তারানা হালিম।
সাম্প্রতিক সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া সফরে তারানা হালিম ফেসবুক ছাড়াও মাইক্রোসফট ও গুগল এবং টেলিকম মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া দেশ দুটির টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠকের ফলাফল ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে সফরের নানা দিক তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী ও বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান আহসান হাবিব খানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।