দীর্ঘ আট বছরেও শুরু হয়নি কক্সবাজার শহর রক্ষা বাধঁ নির্মাণ কাজ। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কক্সবাজারের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও পর্যটন জোন।
জানাযায়, পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর দেশী-বিদেশী প্রচুর পর্যটক কক্সবাজারে আসে। তারই প্রেক্ষিতে পর্যটকদের কক্সবাজারে আসা সহজ এবং আকর্ষনীয় করার জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে ‘আধুনিক পর্যটন শিল্প পার্ক’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯০ সালে একটি উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহন করে সরকার। পাশাপাশি সৈকত তীরে ৬১ হেক্টর এলাকা হোটেল-মোটেল জোন ঘোষনা করে। সরকার ঘোষিত এ জোনে বেসরকারী ভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে গড়ে উঠে কয়েক’শ হোটেল-মোটেল। কিন্তু সমুদ্র সৈকতের অব্যাহত ভাঙ্গনের কারণে পর্যটন জোনটি বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে সমুদ্র সৈকতের ভাঙ্গনের কারণে এ এলাকার অন্তত ৮ টি প্লট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে ‘আধুনিক পর্যটন শিল্প পার্ক’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পিত জোনটির অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়কের শুরু থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত হোটেল-মোটেল, পর্যটন জোনের লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত ভাঙ্গনের কারণে সমস্ত বিনিয়োগ হুমকির মূখে পড়েছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে কয়েকটি হ্যাচারীও। এসব কিছু বিবেচনা করে ২০০৮ সালে “শহর রক্ষা বাধঁ” নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। শহরের কলাতলী বেইলী হ্যাচারী হতে শুরু করে সাগরের পার বরাবর পুরাতন মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনী পয়েন্ট, ডায়াবেটিকস হাসপাতাল পয়েন্ট হয়ে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বেস্টন করে মহেশখালী চ্যানেলের পাড় ঘেষে নুনিয়ারছড়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এ প্রকল্প। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার সফরকালে জেলে পার্ক মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ২০০৮ সালে প্রকল্পটি হাতে নিলেও দীর্ঘ আড়াই বছর পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৫ আগষ্ট পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রেরণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শক্রমে প্রকল্পটি সংসোধন করে ১’শ কোটি ৪৪ টাকা নির্মাণ ব্যায় নির্ধারণ করে ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর প্রকল্পটি পুণরায় পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা(একনেক) কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। সভায় প্রকল্পটি সফল বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমন্বয় করে নতুন করে প্রণয়ন পূর্বক জরুরী ভিত্তিতে এ কমিটির কাছে পূণরায় পেশ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এ নির্দেশের পর এক বছর অতিবাহিত হলেও সমন্বয়ের কোন উদ্যোগই নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচারক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বড় যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামুলক করে দিয়েছে সরকার। তাই কক্সবাজার শহর রক্ষা বাধঁ নির্মাণের জন্যও এ প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, খোজ নিয়ে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনায় ভুল রয়েছে। কারণ তারা প্রস্তাবনায় রাস্তাটি যেখানে নির্মাণের কথা বলা হয়েছে তা মুলত সৈকতের উপর। পাশাপাশি ওই জায়গাটি প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। সুতরাং সৈকতের উপর রাস্তা নির্মাণের কোন সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান বলেন, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে মুলত প্রকল্পটি আটকে আছে। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সীমানা নির্ধারণ হবে,অপরদিকে বৃদ্ধি পাবে সৈকতের সৌন্দর্যও। সেই সাথে বন্দ হবে অবৈধ দখল প্রক্রিয়াও।