কক্সবাজার ডেস্ক :
কক্সবাজারে শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের কাছে শতাধিক মাদক কারবারী আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই ইয়াবা কারবারীদের আত্মসমর্পণের খবরে জেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে। এনিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবরের পাশাপাশি সাধারন মানুষের মাঝেও নানা জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যেন এই জেলার দুর্নাম ঘোচে। এরমাঝে যে বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে তা হলো “কোন শর্তে ইয়াবা কারবারীরা আত্মসমর্পণ করছে”। এনিয়ে সরব আলোচনা চলছে সর্বত্র। ইয়াবা কারবারীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আত্মসমর্পণ করতে গেলেও সরকারের দায়িত্বশীল মহলে এব্যাপারে কোন ঘোষনা না আসায় মূলত এ জল্পনা-কল্পনার সূত্রপাত হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যে ‘চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত’ ইয়াবা চোরাকারবারিরা আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজার শহরে জড়ো হচ্ছেন। এ মাসের শেষেই তাদের আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেই চিহ্নিত মাদক কারবারীরা আত্মসমর্পণ করবেন। তবে আত্মসমর্পণে দেখা যেতে পারে শতাধিক মাদক কারবারী, এদের মধ্যে ‘চিহ্নিত গডফাদার’ও থাকতে পারে। শতাধিক ‘তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী‘ ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরের কোনো এক স্থানে জড়ো হয়ে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
নতুন বছরের শুরুতে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে কক্সবাজারের চিহ্নিত মাদক পাচারকারীদের একটি অংশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানালে বিষয়টি আকার পেতে শুরু করে।
অনেকেই বলছেন অপরাধ বিবেচনায় বড় কারবারী থেকে ছোট কারবারী স্থর ভাগ করে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে কারাগারে প্রেরন করা হবে। এই সাজার মেয়াদ সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন ও হতে পারে। আবার অনেকে বলছেন তাদেরকে নাম মাত্র সাজা প্রদান করা হবে। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি টাকার সম্পদের কি হবে তা নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। কেউ বলছেন তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। কেউ কেউ ধারনা করছেন সম্পদের কিছু অংশ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এধরনের হাজারো আলোচনায় সরব হয়ে থাকছে টেকনাফের হাট-বাজার, চায়ের দোকান সর্বত্র।
তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি সর্বশেষ তালিকায় থাকা চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারীদের ১ হাজার ১৫১ জন কক্সবাজারের। তাদের মধ্যে ৭৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হিসেবে।
এই ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের’ একটি বড় অংশের বসবাস টেকনাফ উপজেলায়। তাদের সবাই কম বেশি প্রভাবশালী, কেউ কেউ আবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের মধ্যে পঞ্চাশেরও বেশি জন এরইমধ্যে পুলিশের হেফাজতে চলে গেছেন। এদের মধ্যে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, মো. শফিক, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু ও তালতো ভাই সাহেদ কামাল, চাচাতো ভাই ও বোন জামাই মো. আলমও রয়েছেন বলে জানা যায় ।
কী ধরনের শর্তে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “স্বাভাবিক জীবনে না এলে মামলা চলবে। আর স্বা্ভাবিক জীবনে গেলে এদের মামলা আমরা দেখব।”
ইয়াবা পাচার করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া ব্যক্তিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের অবৈধ সম্পদ বৈধতা পাবে কি না- সে প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর মন্ত্রী দেননি।
তিনি বলেন, “সম্পদের বিষয়… এটা দুদক বা এনবিআর দেখবে।”
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসাইন বলেন, ইয়াবা চোরাকারবারিদের কাছ থেকে আত্মসমর্পণের ‘প্রস্তাব’ পাওয়ার পর বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান।
“বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ হয়েছে। তারা নিজেরাই যোগাযোগ করে আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে আলোচনা চলছে।”
তবে তিনি দাবি করেন, কক্সবাজারে জড়ো হওয়া ইয়াবা চোরাকারবারিদের পুলিশ হেফাজতে থাকার তথ্য ‘সঠিক নয়’।