বনভূমির পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন, সৃজিত বন বাগানের গাছ লুটপাট সহ রক্ষিত বনাঞ্চল সংরক্ষণে নিয়োজিত পাহারাদার কর্মীদের সহায়তায় বনভূমি দখল করে নানা প্রকার স্থাপনা তৈরীর ফলে হুমকির মূখে পড়েছে জীববৈচিত্র। বনরক্ষা সহায়ক কমিটির নিয়মিত বৈঠক হলেও কথায় আর কাজে মিল না থাকার কারনে ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যায় বরাদ্ধে বাস্তবায়নাধীন উখিয়ার উপকুলীয় ইনানী জাতীয় উদ্যান প্রকল্প। এ প্রকল্পে স্থানীয় বনবিভাগ সরাসরি জড়িত থেকে ১০ হাজার হেক্টর বনভূমিতে পর্যটনসহ জীববৈচিত্র উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করার দ্বায়বদ্ধতা থাকলেও সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা ও বনকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। ইনানী রেঞ্জ কমকর্তা মির আহামদ বলছেন, লোকবল সংকটের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও জাতীয় উদ্যান প্রকল্পের সামগ্রিক উন্নয়নে যথাযত দ্বায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর ঘেষা প্রায় ২১ হাজার একর বনভূমি বাঁচিয়ে রেখে বন্যপশুপ্রাণী, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এনজিও সংস্থা আরণ্যক ফাউন্ডেশন ইনানীর বনে জরিপ চালিয়ে ১০ হাজার একর বনভূমির উন্নয়ন করে জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্বেগ গ্রহন করে ২০০৯ সালে। এ সময় স্থানীয় বন নির্ভরশীল পরিবারদের (সিএমসি) সম্পৃক্ত করে স্থানীয় বনবিভাগ ও এনজিও সংস্থা শেডের মাধ্যমে ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নামে প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০১০ সালে। ইনানী বনরক্ষা সহায়ক কমিটির ফিল্ড সুপারভাইজার সরওয়ার মোর্শেদ জানান, ইনানী বনের আশেপাশে বসবাস করে যারা বনের কাঠ সম্পদ ও জীববৈচিত্র যেমন বাঘ, হরিণ, হাতি, বন্য মোরগ সহ না প্রকার পশুপাখি শিকার করে যুগযুগ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বন নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নানামূখী সকল্প হাতে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ইনানী বনের চারিপাশে অবস্থিত ২৪টি গ্রামের ১৩৬৮ জন সদস্য নিয়ে ২৪টি সমিতি করে দেওয়া হয় । ইনানী রক্ষিত বনাঞ্চল সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রজেক্ট কর্ডিনেটর শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ইনানী বনের সম্পদ রক্ষায় বন নির্ভরশীল ব্যাক্তিদের নিয়ে গড়া ২৪টি সমিতির সদস্যদের ৩৪ লক্ষ ৪ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারা যেন ঐ টাকা দিয়ে শাক সবজি চাষাবাদসহ গরু ছাগল হাস মুরগি লালন পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, এতে ৭৫ শতাংশ বন নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। যে কারনে জাতীয় উদ্যানের আনুষ্টানিকতা শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাটানো হয়েছে।
সরেজমিন হোয়াইক্যৎ রেঞ্জের আওতাধীন ইনানী বনের আংশিক ঘুরে স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইনানী বনরক্ষা সহায়ক কমিটি কতৃক নিয়োগকৃত পাহারাদার ইনানী বনের কাঠ সম্পদ লুটপাট করছে। পাশাপাশি ঐসব পাহারাদার প্রভাব বিস্তার করে ইনানী বনের পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করছে। বনবূমির দখল বিত্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ফলে সেখানে গড়ে উঠছে অংসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। জানতে চাওয়া হলে হ্য়োাইক্যং বনরেঞ্জ কর্মকর্তা সুনিল দেবরায় জানান, লোকবল সংকটের কারনে বনভূমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তথাপিও ইনানী সহ ববস্থাপনা কমিটির আওতাধীন বন রক্ষায় নিয়োজিত পাহারাদারদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ইনানী বনরক্ষা সহায়ক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধ ও স্থানীয় জনসাধারন আন্তরিক না হলে প্রস্তাবিত জাতীয় উদ্যান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা আদৌ সম্ভব নয়। তিনি আরো বলেন, সভা সমাবেশ ও সেমিনার করে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা বাস্তবায়ন করা সংশ্লিষ্টদের নৈতিক দায়িত্ব।