বিদায় নিয়েছে বছরের শেষ সূর্য। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে আস্তে আস্তে তেজদীপ্ততা ছেড়ে মলিন হতে শুরু করেছে সূয্যিমামা। ডিমের কুসুমের মতো গোলাকার সূর্যটা দেখে মনে হতে পারে কপাল জুড়ে লালটিপ দিয়ে সেজেছে বাংলার বধূ। তবে সাজবেই বা না কেন? আজ যে তার বিদায় নেওয়ার পালা! ২০১৮ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখা গেল সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়। এই সূর্যের সাথেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিয়ে বিদায় নিলো আরও একটি বছর। আর কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হবে ইংরেজি নববর্ষ ২০১৯।
সমুদ্রের লোনা জলে গা ভাসানো, বালুকা বেলায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা, আর বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় জানাতে প্রতি বছর কক্সবাজারে সৈকতজুড়ে থাকে লাখো প্রাণের কোলাহল।
কিন্তু নির্বাচনের কারণে এই বিশেষ দিনেও একদম পর্যটকশূন্য কক্সবাজার। সমুদ্র সৈকতের খোলা মঞ্চেও নেই কনসার্ট বা কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন, হোটেল-মোটেলগুলোতেও নেই বাড়তি কোনো চাপ। তবে অল্প কিছু পর্যটক যারা আছেন, তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করেই ইনডোর বা আউটডোর কোনো অনুষ্ঠান রাখা হয়নি বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
থার্টিফার্স্ট নাইটে কোনো কনসার্ট বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় বর্তমানে কিছু পর্যটক যারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে নিরিবিলি পরিবেশে, ঝামেলাহীন পরিবেশ পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন মিনহাজ আহম্মেদ। সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ফাঁকা সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছি, খুব ভালো লাগছে। অন্যান্য বছর এদিনে এখানে অনেক পর্যটক থাকে, আজ ফাঁকা থাকবে জেনেই কক্সবাজার এসেছি। সবাইকে নিয়ে খুব এনজয় করছি।
আরেক পর্যটক ফরিদপুরের আতিকুর রহমান। তিনি সহকর্মীদের সঙ্গে সৈকতে বেড়াতে এসেছেন। আতিক জানান, থার্টিফার্স্ট উপলক্ষেই এখানে আসা। কিন্ত্র এসেই দেখি পুরো সৈকত ফাঁকা। তবুও মজা করছি, তবে কনসার্ট বা অন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকলে আরো ভালো লাগতো।
কক্সবাজার তারকামানের হোটেল দি কক্সটুডে’র পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অন্যান্য বছর এইদিনে হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউসগুলোতে শতভাগ বুকিং থাকে। কিন্তু এবছরের চিত্র ভিন্ন। নির্বাচনের কারণে এখানও কোনো পর্যটক নেই। এমনকি প্রশাসনের নির্দেশনার কারণে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে এবং হোটেলগুলোতে ইনডোর কোনো আয়োজনও রাখা হয়নি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের কারণে বিধি-নিষেধ থাকায় এবার থার্টি ফাস্ট নাইট উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে না। তারপর আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় হোটেল মোটেল জোন, প্রধান সড়ক ও সৈকত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও পুরো শহর সিসিটিভির আওতায় থাকায় কক্সবাজার এখন অনেকটা নিরাপদ। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার ঘুরতে পারবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রতি বছর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে কনসার্টসহ বিনোদনমূলক নানা ব্যবস্থা থাকে। লাখো পর্যটক এখানে সমাগম হয়। কিন্তু এবার নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে থার্টিফার্স্ট নাইটে কোনো আয়োজন রাখা হয়নি।