জাতীয় সম্মেলন ও মুজিববর্ষ উদযাপন করতে দলের তৃণমুলের প্রতিটি ইউনিটকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে আগামী মাস থেকে জেলা উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এবার তৃণমুলকে ঢেলে সাজাতে ও শক্তিশালী করতে নেতৃত্ব বাছাইয়ে সমঝোতা এবং ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন, এই কর্মকৌশলই মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা হবে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সভায় এমন সাংগঠনিক কর্মকৌশল নিয়েছেন দলের নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সম্মেলন ও জাঁকজমকভাবে মুজিববর্ষ উদযাপনে তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সকল স্তরের সাংগঠনিক ইউনিটকে মুজিববর্ষ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আটটি সাংগঠনিক টিম জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সফর শুরু করবে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলের সকল স্তরের কমিটি গঠন, নেতাদের সঙ্গে সংসদ সদস্যদের কোন্দল নিরসন করে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলার কর্মকৌশল নেয়া হয়েছে। এ সফরগুলোতে যাতে স্থানীয় এমপিদের উপস্থিতি থাকে তাই সফর শুরু হবে ২৪ এপ্রিল শুরু হওয়া জাতীয় সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পর।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সফর শুরুর সিদ্ধান্ত ছিল। যেহেতু ২৪ এপ্রিল থেকে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসবে, তাই আপাতত সফর স্থগিত করা হয়েছে।’
এই সফরে জেলা-উপজেলা কাউন্সিলে নেতৃত্ব নির্বাচন কি প্রক্রিয়ায় হবে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, ‘আমরা গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে কাউন্সিল করি, সেটাই হবে। চাইলে আলোচনার মাধ্যমেও হতে পারে। কারণ যদি একজন করে প্রতি পদে প্রার্থী হয় তাহলে তো ভোটের দরকার নাই। তাই আগে আলোচনা করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতাকেই প্রথমে গুরুত্ব দেয়া হবে। আর সেটা সম্ভব না হলে ভোটের মাধ্যমে হবে। উপজেলা সম্মেলনের পর জেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভাও করা হবে।’
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ২০২০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয়ভাবে কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে প্রতিটি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করে উদযাপন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
এদিকে, শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) আমাদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছু দলীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালি করার। কারণ, দেশের সাধারণ মানুষের আশা-আকঙ্খার একমাত্র জায়গা হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা এখনও অনেক বেশী। তাই আওয়ামী লীগকে তৃণমূল থেকে শক্তিশালী করতে দলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের স্ব-স্ব সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন।’
এছাড়াও, বৈঠকে মুজিববর্ষ উদযাপনে আট বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের প্রতিটি জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে দলীয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেবেন। জাতির পিতা দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সফর করেছেন, অনেকের সাথে মিশেছেন, অনেকের সাথে সেই সময় ছবি তুলেছেন, কাউকে হয়ত চিঠি লিখেছেন; সে বিষয়ে কোনো দুর্লভ চিঠি, ছবি বা কোন তথ্য-উপাত্ত থাকলে সেগুলো তৃণমূলের মাধ্যমে সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন, এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে।