‘দেশের উন্নয়ন বৃদ্ধি এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) করেছিলেন। জাতির পিতা যে পদ্ধতিটা নিয়েছিলেন এটা যদি কার্যকর করা যেত তাহলে বাংলাদেশে আর কখনো জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ খেলতে পারত না। জনগণ তার মনমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারত।’
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কেন্দ্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতার কর্মসূচি ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমনই একটি অবস্থার মাঝে জাতির পিতা সিদ্ধান্ত নেন, যে করেই হোক আমাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। দেশের উন্নয়ন বাড়াতে হবে এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। যেটাকে সংক্ষিপ্ত আকারে (বাকশাল) নামে পরিচিত করা হয়েছিল। বাকশাল গঠনের পর এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।’
‘প্রকৃতপক্ষে তিনি সব দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে অর্থনৈতিক মুক্তির অর্জনটা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী করার জন্য যতগুলো মহকুমা ছিল সেগুলোকে জেলায় রূপান্তর করেন। ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করে তৃণমূল মানুষের কাছে ক্ষমতা পৌঁছে দেওয়া এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, এটাই ছিল তার লক্ষ্য।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের দোসরসহ আন্তর্জাতিকভাবে একটা বিরাট চক্রান্ত কাজ করছিল দাবি করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যখন তারা দেখল এর ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে, স্বাবলম্বী হবে আর বাংলাদেশকে কখনো থামিয়ে রাখা যাবে ঠিক তখনি তারা তাদের চক্রান্ত শুরু হল। কারণ জাতির পিতার উদ্যোগটা ছিল, ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ গঠন করে সকল দলকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার চালানো শুরু হয়েছিল।’
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের বাইরে ৯টা সিট আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যদের পাওয়ার দিকটি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলগুলো যারা কখনো নির্বাচনে হয়ত জয়ী হতে পারে না, তাদের সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামক একটি প্লাটফরম তৈরি করা, যেখানে জাতীয় ঐক্য হবে। যে ঐক্যের মধ্য দিয়ে সকলকে দেশের উন্নয়নে কাজ করবে এবং সেখানে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে সকলকে এক জায়গায় নিয়ে এসে একটা প্লাটফরমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে কাজ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।’
বাকশালে ভোটের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অধিকারটা তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে যাতে পৌঁছায় এবং তারা যেন স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে, সেই সুযোগটা তিনি সৃষ্টি করে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ এখানে তার একটা যুক্তি ছিল।’
বাকশাল পদ্ধতিতে সেই সময় অনুষ্ঠিত দুটি নির্বাচনের উদাহারণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুইটা নির্বাচন হয়েছিল। একটা কিশোরগঞ্জে। সেখানে আমাদের তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। আর কয়েকজন সাধারণ মানুষ এবং স্কুল মাস্টার। কিন্তু সেই স্কুল মাস্টার নির্বাচনে জয়ী হয়। অর্থ্যাৎ জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার যে অধিকারটা সুনিশ্চিত হয়েছিল, এটিই তার প্রমাণ।’
কো-অপারেটিভের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বাকশালে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই তার গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে বলতে পারি বাংলাদেশ ৫/৭ বছরের মধ্যেই উন্নত, সমৃদ্ধশালী হতে পারত। ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে আমরা জাতির পিতার বিভিন্ন অনুসৃত বিভিন্ন পথ অনুসরণ করে তার অর্থনৈতিক নীতিমালা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন গ্রামপর্যায় থেকে গড়ে তোলার তৃণমূল থেকে যাতে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয় সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছিল। মানুষের মাঝে একটা আস্থা বিশ্বাস ফিরে এসেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে আর সরকারে আসতে পারলাম না। জনগণের ভোট বেশি পেয়েছিলাম কিন্তু আমরা সিট পেলাম। সেখানেও একটা চক্রান্ত ছিল। কারণ দেশের সম্পদ অন্যের কাছে বিক্রি করতে চাইনি বলেই আমাদের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হয়।’