সদর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা তিন দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভুলে আনোয়ার হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় স্বজনরা। পাশাপাশি কর্তব্যরত কয়েকজন চিকিৎসকের ওপর হামলা চালানো হয়। এর প্রতিবাদে চিকিৎসকরা কর্মবিরতির করায় সেবা পাচ্ছে না রোগীরা।
হাসপাতাল ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার বিচারের দাবিতে শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ইন্টার চিকিৎসক পরিষদ। বিএমএসহ সব চিকিৎসক, কর্মচারী-কর্মকর্তারাও এতে যোগ দিয়েছেন। তাদের দাবি, ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপদ কর্মস্থল না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নুর আহমদ জানান, তিন দিন ধরে কোনও ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দিতে আসেনি। তিনি অপারেশনের রোগী। তারা বলছে, বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু এ অবস্থায় কি বাড়ি যাওয়া সম্ভব? একজন রোগীর জন্য সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে তারা। চিকিৎসকরা অমানবিক আচরণ করছে।
সবকিছু গুটিয়ে চলে যাচ্ছেন টেকনাফের ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, কে কী করলো তা নিয়ে কোনও ঘোষণা ছাড়া চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করতে পারে না। তাও আবার সদর হাসপাতালের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মুমূর্ষু রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি হাসিবুন নাসিম সোহান বলেন, ‘একজন রোগী মারা গেছে। আমরা তাকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তারপরও রোগীর স্বজনরা সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমাদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। যতদিন হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হবে, ততদিন কর্মবিরতি চলবে।’
জানতে চাইলে কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যদি চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া না হয় তাহলে সারা বাংলাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। প্রশাসনের উদ্দেশে বলতে চাই, আগে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, অন্যথায় চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো না আমরা।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার বলেন, ‘শুধু ইন্টার্ন চিকিৎসক নয়, সব চিকিৎসকরা মানবিকভাবে সাধারণ মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, কোনও ঘটনায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া অমানবিক। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আন্দোলন সংগ্রাম না করে চিকিৎসকরা হাসপাতালে ফিরে যাক। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের নিরাপত্তা দিয়ে যাবো।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার এবং রোগীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাটি উভয়পক্ষ মীমাংসা করেছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু আর কোনও ঘটনা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এছাড়াও হাসপাতা লিখিত কোনও অভিযোগ না দেওয়ায় আমাদের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলার একটি মাত্র ২৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে জেলার ৮ উপজেলার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ।