বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে বিভাজন করেছে নাফ নদী। নাফ ঘিরে দুই দেশের প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার নৌ–সীমান্ত। কক্সবাজার জেলার একমাত্র আন্তর্জাতিক নদী এটি। এর পশ্চিম অংশে বাংলাদেশ, অন্যদিকে মিয়ানমার।
টেকনাফের নামকরণ ও সৌন্দর্যে নাফ নদীর প্রসঙ্গ আসে। স্বচ্ছ, স্রোতস্বিনী এ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সরাসরি যেতে হবে। দেখতে হবে নদীর স্রোতধারা, জালিয়ার দ্বীপ, লাল দ্বীপ, ছোয়ারদিয়াসহ একাধিক ছোট ছোট দ্বীপ ও আশপাশের পাহাড়। দেখা যাবে নাফ নদীর উপর নির্মিত পরিবেশ অধিদপ্তরের জেটি, সড়ক ও জনপথ রেস্ট হাউজ জেটি, শাহপরীর দ্বীপ জেটি ও টেকনাফ–মংডু ট্রানজিট জেটির মনোরম দৃশ্য।
নাফের পশ্চিমে কেওড়াগাছের সবুজ বেষ্টনী যেন প্রকৃতির অপূর্ব এক সৃষ্টি। উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নাফ নদীর তীরে এবং ভেড়িবাঁধে প্রতিদিন ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন ট্রানজিট জেটি এলাকার পর্যটনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। টেকনাফ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে নাফ নদের উপর নির্মিত এই জেটি দেখতে প্রতিদিন শত শত নারী–পুরুষ ও শিশু ছুটে আসছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেটি এবং এর আশপাশ ঘুরে দেখছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি টেকনাফে ভ্রমণে আসা পর্যটকরাও এ জেটি দেখতে আসেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৫৫০ মিটার, প্রস্থ ৪.০৫ মিটার। ল্যান্ডিং এরিয়ার দৈর্ঘ্য ৪২ মিটার এবং প্রস্থ ৩১ মিটার। জেটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এবং নির্মাণ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। জেটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামাগার, শৌচাগার, মিয়ানমার ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবহারের জন্য ৭টি সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে জেটির সম্মুখভাগে ৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৬০ মিটার প্রশস্ত গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান আছে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের কয়েকটি স্থাপনায় সন্ত্রাসী হামলার রেশ ধরে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ–মংডু ট্রানজিট যাতায়াত।
১৯৮১ সালের দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার এক চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে ১ দিনের ট্রানজিট যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু করে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে টেকনাফ–মংডু ট্রানজিট যাতায়াত করত একটি কাঠের জেটি দিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে জাতিগত বিরোধের সূত্র ধরে দুই দফায় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এরপর থেকে ট্রানজিট যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গত এপ্রিলের শেষ দিকে এটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও হয়নি।
তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও প্রতিদিন শত শত মানুষ জেটিতে যান। অনেকে মিয়ানমারের অংশ দেখতে যান। আবার কেউ কেউ জেটির বিভিন্ন অংশে বড়শি বা জাল দিয়ে মাছ ধরেন। সব মিলে এ জেটি এখন টেকনাফের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান গত ১ ডিসেম্বর সপরিবারে টেকনাফ ভ্রমণ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, নাফ নদীর জেটিটি সুন্দর, তা পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। জেটিতে গেলে একদিকে মিয়ানমার, অন্যদিকে বাংলাদেশের পাহাড়ি অংশ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবছার উদ্দিন জানান, সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকদের সুবিধার্থে এবং ট্রানজিটের লক্ষ্যে জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হওয়ায় পর্যটনের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে।
টেকনাফকে পর্যটন জোনে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেটিটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। তিনি বলেন, টেকনাফের উন্নয়নে এটি ভূমিকা রাখবে। শুধু মিয়ানমারে যাতায়াত নয়, এটি ব্যবহার করে অল্প সময়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকরা। নাফ নদীতেও সহজে ভ্রমণ করা যাবে। এতে পর্যটনের প্রসার ঘটবে বলেও মনে করেন তিনি।