খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সাত মাইল এলাকার বাসিন্দা বসন্ত কান্তি ত্রিপুরা। বৃহস্পতিবারে হাটে নিয়ে এসেছে প্রায় ২০০ আঁটি ফুলের ঝাড়ু ।প্রতিটি আঁটি বিক্রি করছে প্রায় ১২–১৫ টাকায় । এতে তার এক হাটেই আয় হয় প্রায় ২৬০০– ৩০০০ টাকা।প্রতি হাটেই এমন আয় হয়।এই নিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুল ঝাড়ু বিক্রি করেছে বসন্ত কান্তি চাকমা। বসন্ত কান্তির মতই অনেক পাহাড়িরা এই ফুল ঝাড়ু বিক্রি করে আয় করে। তার মত অনেক চাষীই এভাবে সংসার চালাচ্ছে। পৌষ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত চলে ফুল ঝাড়ুর মৌসুম।অনেক কৃষক গভীর জঙ্গল থেকে ফুল ঝাড়ুর সংগ্রহ করে। এছাড়া পাইকারী ব্যবসায়ীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে ঝাড়ুর কিনে নেয়।
একসময় প্রাকৃতিকভাবে ঝাড়ুও হলেও বর্তমানে অনেক চাষীই ফুল ঝাড়ুও চাষ করছেন। এতে ঝাড়ুর অনেক বড় হয়। দামও বেশী পাওয়া যায়। বর্তমান বাজার প্রতি আঁটি ঝাড়ু ১৩–১৫ টাকায় বিক্রি হলেও পাইকারীরা অগ্রিম টাকা দিয়ে কেনায় দাম পড়ে ৮–১০ টাকায়। খাগড়াছড়ি ফুল ঝাড়ু সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন,‘প্রায় ১২ বছর ধরে ঝাড়ু ব্যবসা করছি। পৌষের শুরু থেকে ঝাড়ু সংগ্রহ শুরু হয়। বেশীর ভাগ ঝাড়ু অগ্রিম টাকা প্রদান করে কেনা। খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি ও সাজেকের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝাড়ু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি আঁটি ঝাড়ু কেনা হয় ৮–১০ টাকা। ঝাড়ু কেনার পর খোলা মাঠে ঝাড়ু শুকানো হয়। প্রায় ১৫ দিন শুকানোর পর আঁটিগুলো একত্র করা হয়। ২০ টি আঁটি দিয়ে ১টি রুম তৈরি করা হয়।
একসময় ফুল ঝাড়ুতে ভালো লাভবান হলেও বর্তমানে লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন,‘ভারত থেকে অবৈধ পথে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ফুল ঝাড়ু আসায় দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ।ফলে পার্বত্য এলাকায় উৎপাদিত ঝাড়ুর দাম কমে যাচ্ছে।আগের বছর তুলনায় প্রতি আঁটিতে প্রায় দশ টাকা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান ,প্রতি আঁটি ঝাড়ুতে আমার ৫০ পয়সা ট্যাক্স দিতে হয়। প্রতি গাড়ি(ট্রাক) প্রায় ১২১৪৬ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিই । প্রতিবছরে লাখ লাখ টাকা সরকারকে রাজস্ব দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার ঋণ দেওয়া হয়না । খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বাসিন্দা শান্তি চাকমা বলেন,‘এক সময় প্রচুর ঝাড়ু সংগ্রহ করা যেত। দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে শ্রমিক দিয়েও ঝাড়ু সংগ্রহ করা হত।কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় ঝাড়ু আসার কারণে পাহাড়ি ঝাড়ুর দাম কমে গেছে।
খাগড়াছড়ি ঝাড়ু সমিতি সূত্রে জানা গেছে,পাহাড়ে জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ঝাড়ুপাইকারদের হাত ধরে সারা দেশে যায়।বিশেষ করে ঢাকা, zটাঙ্গাইল ও চট্টগামের থেকে সারা দেশে যায়। গত মৈৗসুমে প্রায় ৩২০ টি ট্রাক ঝাড়ু দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এই মৌসুমে ২০০ গাড়ি ঝাড়ু পাহাড় থেকে সমতলের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে । যার বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা । ঝাড়ুর সংগ্রহ ও বিপণনের সাথে পাহাড়ের হাজারো বাসিন্দা জড়িত। বিশেষত জুমের ফসল শেষ হওয়ার পর পৌষ থেকে চৈত্র এই চার মাস ঝাড়ু বিক্রি করেই জীবিকা চলে।
One thought on "পাহাড়ের ফুলঝাড়ু : মৌসুমে লেনদেন ৮ কোটি টাকা"
Comments are closed.