‘আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি পরে নির্বাচন নিয়ে ভাবনা’ এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে ২০ দলীয় জোট। বৈঠকে বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে গৃহীত কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে একই মত পোষণ করেছেন নেতারা। জোটের কার্যক্রম সঠিকভাবে সমন্বয় করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আজ শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্ত হয়।
পাশাপাশি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চুড়ান্ত কর্মসূচী বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈঠকের শুরুতে বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটের শরীক এলডিপি ও জাগপার প্রার্থী চুড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ এবং সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।এর জবাবে দেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব শাহাদৎ হোসেন সেলিম। তার সঙ্গে যোগ দেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান। সেলিম বলেন, ‘তারা কোনো তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করেননি।’তবে লুৎফর রহমান বলেন, ‘তার দল এই তালিকা চুড়ান্ত করেছেন।’তবে তাদের এই আলোচনা থামিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন কেউ কোনো তালিকা দেবেন না, জোট নেতা খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে এ বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘জোট নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার হবে-এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’এ সময় সবাই বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। পরে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিটি দল খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা কর্মসূচি করবে। সেখানে অন্য দলগুলোও অংশ নেবে। একই সঙ্গে বিএনপি যেসব কর্মসূচি নেবে সেখানে ২০ দলীয় জোটের শরীক দলের নেতাকর্মীরা যোগদান অব্যাহত রাখবে।এই লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভাগী ও জেলা পর্যায়ে সমাবেশ, মানববন্ধন, লিফলেট বিরতণ ইত্যাদি।সন্ধ্যা সোয়া ৭ টা শুরু হয়ে পৌনে নয়টা পর্যন্ত চলে বৈঠকটি। শুরুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে জোটের সমন্বয়কের নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। সকলের সম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।এছাড়া আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটের অংশগ্রহনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। এসময় শরীক দলগুলোর মতামত নিয়ে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের প্রতিনিধি দেখা করে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান।২০ দলের নেতারে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আব্দুল হালিম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এমএ রকিব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লূৎফর রহমান, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টির মহাসচিব মোহাম্মদ আব্দুল কাশেম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি আব্দুর রব ইউসুফী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপ-ভাষানীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ পিপলস লীগের গরীব নেওয়াজ, লেবার পার্টি ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং হামদুল্লাহ আল মেহেদী।