মিয়ানমারের রাখাইনে অন্তত দশটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রাম গুড়িয়ে দিয়ে সেনাবাহিনী নতুন করে চারটি আধাসামরিক বাহিনীর ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করছে। রাখাইনের মংডুতে তিনটি ও বুচিডং এ একটি রেজিমেন্ট স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে।এ চারটি রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠায় এক হাজার একরের বেশি জমি দখলে নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা শুণ্য গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বুলডোজার সহ ভারী মেশিনারীজ দিয়ে সমানে নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে। রাখাইনে একের পর এক সহায় সম্পদ দখল করে নেয়ায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার পথ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের নেতৃত্বে তেরজন সাংবাদিককে উত্তর রাখাইন পরিদর্শন করানো হয়।সফর সঙ্গী ইরাওয়ার্দী অনলাইনের সাংবাদিক মোই মিন্ট লিখেছেন মংডু এবং বুচিডং এর মধ্যে ১৪০ কিঃমিঃ হাইওয়ের উভয় পাশে ডজনের বেশি গ্রাম দেখা গেছে গাড়ি থেকে।দীর্ঘ এ সড়ক জুড়ে বুলডোজার, ভারী ডাম্প ট্রাক, যন্ত্রপাতি দেখা গেছে। গ্রাম গুলোর অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের, যেগুলো গত আগস্টের পর থেকে প্রায় জনমানব শুণ্য। কোনটি সম্পূর্ণ ,আবার কোনটি আংশিক আগুনে পোড়া। সাংবাদিকদের এসব গ্রাম আরো কাছ থেকে দেখগার আগ্রহ সরকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গ্রহন না করায় প্রকৃত বাস্তবিকতা দেখা যায়নি।তবে ঐ মন্ত্রনালয়ের বহরের নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন মংডুতে তিনটি ও বুচিডং এ একটি বর্ডার পুলিশের নতুন রেজিমেন্ট স্থাপনের কথা।
মূলত এসব ভারী যান্ত্রিকতা রেজিমেন্ট স্থাপনা নির্মানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।মংডুর মিও থু গিই গ্রাম গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটি রেজিমেন্ট স্থাপনের নির্মান কাজ করা হচ্ছে।এ গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকায় আগস্ট হামলার পূর্বে প্রায় দশ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস ছিল।এখন সেখানে কোন ঘর-বাড়ি বা জনমানবের ও অস্তিত্ব নেই।সবকিছু বোল্ড ডোজার দিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।মংডু জেলা শহরতলীর কায়ান চং গ্রামে করা হচ্ছে অপর রেজিমেন্ট স্থাপনের কার্যক্রম। এটির জন্য দুইশ একরের বেশি জমি পরিষ্কার করা হয়েছে।এখানে রোহিঙ্গা, রাখাইন, হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের বসতি ছিল।রোহিঙ্গারা পালিয়ে চলে গেছে বাংলাদেশে। অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনদের অন্যত্র পূর্নবাসন করা হচ্ছে।অন্য রেজিমেন্টটির কাজ শুরু হয়েছে মংডুর দক্ষিনঁটিআলোচিত ইন ডিন বা আং ডাং গ্রামে।
রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতভিটা, আবাদী জমি দখল করে সেনাবাহিনী ইতিপূর্বে বুচিডং এলাকায় বকয়ক হাজার একর জমিতে সেনা ঘাঁটি নির্মাণ কাজ করছে।গত ডিসেম্বর থেকে মংডুতে তিনটি ও বুচিডং এ নতুন করে আরো চারটি আধাসামরিক রেজিমেন্ট স্থাপনের কাজ চালানো হচ্ছে।বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পাদিত রোহিঙ্গা প্রত্যার্পন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গারা সাময়িকের জন্য ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থানের পর নিজ নিজ গ্রামে পুরনো বসত ভিটায় বা আশপাশের গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথা।কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেভাবে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসতভিটা ও আবাদি জমিতে একের পর এক সামরিক ও আধাসামরিক স্থাপনা এবং রাস্তা ঘাট, বানিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করছে তা চুক্তির লংঘন বলে জানা গেছে।উখিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জানান, নিকট আপনজন, স্বজন হারানোর বেদনা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি সহ সর্বস্ব হারানোর অনুভূতি এখনো রোহিঙ্গাদের তাড়া করছে। এ অবস্থায় সরকার ও সেনাবাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সহায় সম্পদ, আবাদী জমি দখলে নিয়ে নানা স্থাপনা করছে সেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মত অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠছেনা বরং ফেরার পথ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।
One thought on "ক্রমশ কঠিন হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরার পথ"
Comments are closed.