নগরীর রায়েরমহল এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইয়াকুব হোসেনের প্রত্যাশা, নবনির্বাচিত মেয়র যেন জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা নেন। সাতরাস্তা মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে ভোগায়। সে কারণে এ সমস্যার দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন।’
জিন্নাহপাড়া এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি আহসান হাবিব বলেন, ‘নগরীর রাস্তাগুলোর অবস্থা ভাঙাচোরা। নগরীতে ঘুরতে যাওয়ার মতো ভালো কোনো জায়গা নেই। গত পাঁচ বছরে নগরীতে তেমন কোনো উন্নয়নও হয়নি। সবার প্রত্যাশা- নতুন মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবার নাগরিক দুর্ভোগগুলো নিরসনে উদ্যোগী হবেন।’
খুলনা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন বুধবার সকালে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে তালুকদার আবদুল খালেক ৩১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। তার নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ই ছিল। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর সে ইশতেহার বাস্তবায়নই তার জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করি আমি।’
শুধু এই তিনজনই নন, নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী নগরীর উন্নয়ন করা। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কাজ হলে পাল্টে যাবে নগরীর চেহারা। এ ছাড়া চলমান উন্নয়ন প্রকল্প অব্যাহত রাখা, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য দল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করা এবং সিটি করপোরেশন থেকে সুযোগ-সুবিধা নিতে চাওয়া নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করাও তার জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
নতুন মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের নির্বাচনী ইশতেহারের ১ নম্বরে ছিল সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ। সরকার এ বিষয়ে কতটা একমত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে জনমনে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা খুলনা নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। এখন অসময়ের সামান্য বৃষ্টিতেও নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর তাকে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে। খুলনাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। ইশতেহারের সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মেয়রকে।
নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন মেয়র হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নতুন আয়ের উৎস সৃষ্টি, নগরীর শিববাড়ি মোড়ে সিটি সেন্টার নির্মাণ, ওয়াইফাই জোন তৈরি, লেডিস পার্ক ও দুটি শিশুপার্ক নির্মাণের বিষয়টি রয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। তিনি ভৈরব ও রূপসা নদীতে ওয়াটার বাস চালু, সুইমিংপুল নির্মাণ, যানজট নিরসন এবং হল ও নাট্যমঞ্চ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেন ইশতেহারে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, হকারদের পুনর্বাসন, নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও ভবঘুরে ভিখারিদের পুনর্বাসন এবং নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়টিও আছে সেখানে।
নগরীর বেশিরভাগ সড়কের অবস্থা ভাঙাচোরা। অনেক সড়কেই নেই পর্যাপ্ত সড়কবাতি। নগরীর বিদ্যমান পার্কগুলোর অবস্থা বেহাল। এসব সমস্যার নিরসন চায় নগরবাসী। নগরী- সংলগ্ন এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে। নগরীর এলাকা সম্প্রসারণের জন্য অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ; কিন্তু তেমন গতি পায়নি এ উদ্যোগে। সিটি করপোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশতেহারে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন এবং নগরীকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা- প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করবেন তিনি।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘বর্তমানে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখা নতুন মেয়রের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এ ছাড়া বিরোধী দলগুলো থেকে যেসব কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করা তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা।’
নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বুধবার তার বাসভবনে বসে সমকালকে জানান, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মেয়র ছিলেন তিনি। চারবার সংসদ সদস্য ও একবার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ফলে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার আছে। তিনি অনেক বিচার-বিবেচনা করেই ইশতেহার দিয়েছিলেন। বর্তমানে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার, তিনি সে দলের মহানগর সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী তাকে সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করিয়েছেন। ফলে খুলনা এবং তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি রয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন তার জন্য খুব একটা চ্যালেঞ্জ হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।
নতুন মেয়র বলেন, আমি মেয়র থাকাকালে কখনই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিইনি, এবারও দেবো না। উন্নয়ন কাজের মান নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে।