জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৪৩ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সাগর পাড়ের লাবণী পয়েন্টে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সাগর পাড়ে এই প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্র সাংবাদিক পাভেল রহমানের তোলা প্রায় একশ ব্যতিক্রমধর্মী ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি।
১৪ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন। এসময় বক্তব্য রাখেন আলোকচিত্র সাংবাদিক পাভেল রহমান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে:কর্ণেল(অব) ফোরকান আহমেদ,ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো: জিল্লুর রহমান,কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড.একেএম ইকবাল হোসেন,জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এভোকেট সিরাজুল মোস্তফা,কক্সবাজার সদর-রামু সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন।
আলোকচিত্র প্রদর্শনির উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর ইতিহাসেও সমুজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু। তার বর্ণাঢ্য জীবনের আলো ছড়িয়ে আছে বিশ্বে। তাই এই মহামানবের ছবি বিশ্ববাসীকে জানান দিতে বিশ্ব সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকতে যে আলোকচিত্র প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বিশ্ব পর্যটকরাও জানতে পারবেন বঙ্গবন্ধুর মহা সংগ্রামি জীবন সমন্ধে।
বক্তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর এক -একটি ছবি এক- একটি ইতিহাস। ইতিহাস নিয়ে যতই মিথ্যাচার করা হোক না কেন, ছবি তার প্রমাণ দেবে সত্য ইতিহাসের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বাংলাদেশের স্রষ্টা, তেমনি সত্য হাজারো বছরের বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ট সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
১৪ আগস্ট বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে প্রথম বারের মত ব্যতিক্রমধর্মী এ প্রদর্শনীতে ১৯৭৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শেষবারের মতো ভাষা শহীদদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শ্রদ্ধা নিবেদনের ছবি রয়েছে। একইভাবে রয়েছে শেষ জন্মদিনে ছেলে শেখ কামালের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু। রয়েছে আবাহনী দলের খেলোয়াড় আর কর্মকর্তাদের আলোকচিত্রও। কচি-কাঁচার শিশুদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হ্যাসোজ্জ্বল আলোকচিত্রও ঠাঁই পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে। সৈকতের প্রদর্শনীতে চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধুর চিরচেনা লুঙ্গি-স্যান্ডো গেঞ্জি পরে পাইপ টানার ছবিটি।
রয়েছে ১৯৭৩ সালে ছাত্র ইউনিয়নের জাতীয় সম্মেলনে তার তোলা বঙ্গবন্ধুর প্রথম ছবিগুলো। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিতে ভাস্কর নানা বস্তু ও স্থানের আলোকচিত্রও স্থান পেয়েছে। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানি পাসপোর্টের আলোকচিত্র। আছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ, লাইব্রেরি, ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পানের বাটা, টেলিফোন সেটসহ নিত্য-ব্যবহার্য নানা দ্রবাদি।
১৯৮২ সালে বাবার কবরে প্রথমবারের মতো মেয়ে শেখ হাসিনার পুষ্পস্তবক দেয়ার ছবিটি বেদনার রেখা টেনে যায়। যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল সেনা সদস্যরা, সেই সিঁড়িতে মেয়ে শেখ হাসিনার গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে ঢেকে দেয়া আলোকচিত্রটিও রয়েছে। আছে টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শেখ হাসিনার কোরআন পাঠের আলোকচিত্র।
কক্সবাজার ইসলামিয়া মহিলা কামিল (অনার্স মাষ্টার্স) মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান সারি সারি একের পর এক ছবি দেখে বলেন, ‘এসব ছবি দেখে অনেকেরই ভুল ভাঙ্গার কথা। তবে অপপ্রচারে আমি কোনোদিন আস্থা আনিনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুৎসারটনাকারী ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানায় নুসরাত।’
কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জিনান রাওয়া বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এলাকায়। আমাদেরই গ্রামে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কতইনা বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালাত কতিপয় লোক। অথচ এই লোকগুলো কি জানে না পরকালে একজন গীবতকারীর কঠিন শাস্তির বিধান রেখেছেন সৃষ্টিকর্তা।’ ছাত্রী জিননা রাওয়া বলে-বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে গ্রামে গ্রামে প্রদর্শনীর আয়োজন করা দরকার।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীতে দর্শনার্থী হিসাবে উপস্থিত কিশোরীরাই এসব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এত অল্প বয়সের কিশোরীদের এমনসব কথা শুনে উপস্থিত সুধীজনই হতবাক হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে টুঙ্গিপাড়ার সেই চির শায়িত কবরকে ঘিরে গড়ে তোলা স্মৃতি ভবনটির ছবি দেখে আবাল-বৃদ্ধ বণিতাও নিঃশ্বাস ফেলছে।
তিন দিনের এ প্রদর্শনী চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে প্রথম বারের মত আয়োজন করা ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীটি।
প্রদর্শনী নিয়ে আলোকচিত্র সাংবাদিক পাভেল রহমান বলেন, কক্সবাজারের সাগরের গর্জনের মতই বঙ্গবন্ধু গর্জে উঠেছিলেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে। সাগরের মতই ছিল তাঁর হৃদয়।আর এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করবে নতুন প্রজন্ম এবং কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা।তাই এ ছবিগুলো এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। ’তিনি আরও বলেন, ব্যতিক্রমধর্মী এ প্রদর্শনীটি আয়োগনে সহযোগীতা করায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।