সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আসন্ন অধিবেশনই হবে বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশন। এ অধিবেশনেই পাস হবে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। সংসদে উত্থাপনের জন্য ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনটির খসড়া সংসদে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ ও পরিবহন খাতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে একথা জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দুর্ঘটনা কমাতে মন্ত্রীত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করছি। এখনো হাল ছাড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সড়কে দুর্ঘটনার জন্য বেপরোয়া মনোভাব ও বিশৃঙ্খলাকে দায়ী করে তিনি বলেন, দু’দিন আগে দেখলাম দশ জন মারা গেছেন, দশ জনই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত। মোটর সাইকেল ভয়ঙ্কর আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
মহাসড়কে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার জন্য ধীরগতির ছোট যানবাহনকে দায়ী করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইজিবাইক কারখানা আছে কয়েকশো, উৎসমুখ বন্ধ করতে পারিনি। প্রতিনিধি সভায় সবাই এসেছেন। ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসেছেন কিন্তু বাস্তবায়ন শূন্য। মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করি এমন হয়।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২২ জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। নসিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইকের মতো নিবন্ধন যানবাহন সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ। ওবায়দুল কাদের বলেন, নিষিদ্ধ যানবাহন ২২ মহাসড়কের কোথাও নব্বই, কোথাও আশি ভাগ বন্ধ হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কারণেই সড়কে অবৈধ যান চলাল বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা পেছন থেকে মদদ দেন। রাজনীতি যদি ঠিক হতো তাহলে বাংলাদেশের সব ঠিক হতো। রাজনীতিই মূল সমস্যা। ঢাকায় প্রায় সবাই মোটর সাইকেল চালাতে হেলমেট পড়ে। যারা হেলমেট পড়ে না তার রাজনীতির লোক। তারা কাউকে পাত্তা দেয় না।
সাধারণ পথচারীদেরও দায়ী করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডার আছে। কিন্তু ডিভাইডার দিয়ে কী হবে! কেউ কথা শুনে না। যেখানে ফাঁকা আছে সেখান দিয়েই মানুষ পা হয়। কেউ জেব্রা ক্রসিং মানে না। ঢাকা শহরে কেউ নিয়ম-কানুন মানে না। বেপেরোয়া চালকের সঙ্গে পথচারীও বেপরোয়া। বর্ষাকালে জলজট, জনজট ও যানজট লেগে যায়। মানসিকতার পরিবর্তন না হলে মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, এলিভেটেড এপপ্রেসেওয়ে করে লাভ হবে না।
সভায় কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ সড়ক পরিবহন আইন পুনঃবিবেচনা করে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। অতীতে সড়কের নিরাপত্তায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তা কেন বাস্তবায়ন হয়নি পর্যালোচনা করতে বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হয় না। আর কে নির্দেশ দিলে বাস্তবায়ন হবে?
নিরাপদ সড়ক চাই-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দুর্ঘটনা ঘটনানো কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক দুর্ঘটনা ঘটালে ৩০২ ধারার মামলার বিধান রাখতে হবে সড়ক পরিবহন আইনে। সড়কে মৃত্যুর সাজা ১০ বছর করতে হবে। ওবায়দুল কাদের এর জবাবে বলেন, সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর সংসদীয় কমিটিতে যাবে। কমিটি নাগরিক সমাজের বক্তব্য শুনবে। এখনো সংশোধনের সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, ঢাকায় গণপরিবহন কোম্পানি করতে হবে। ঢাকায় বৈধ পার্কিংয়ের স্থান, গণপরিবহনে হাইড্রলিক দরজা ও রিকশায় লুকিং গ্লাস রাখতে হবে।