জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশাপাশি ২০-দলীয় জোটকেও সচল রাখবে বিএনপি। উভয় জোটের ব্যানারেই আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করা হবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। দলটির একাধিক নেতা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের চাওয়া ও চিন্তাভাবনা একই। উভয় জোটই চাচ্ছে দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে। জামায়াত বাদে ২০-দলীয় জোটের যে দলগুলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যাবে, সব দলই উভয় জোটের শরিক হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের চাওয়া এক ও অভিন্ন। সেখানে বিএনপি আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। ২০-দলীয় জোটও সচল থাকবে। এ ব্যানারেও কর্মসূচি হবে। গতকাল রাতে এ নিয়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০-দলীয় জোটের বৈঠক হয়।জোট নেতাদের এক প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুগপৎ আন্দোলন করবে। দ্রুতই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এর পর ২০-দলীয় জোটের বৈঠক ডেকে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।নতুন জোট সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় ২০-দলীয় জোটের শরিক চারটি দলকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলগুলো হচ্ছে কর্নেল (অব) অলি আহমেদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), মেজর জেনারেল (অব) মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। জামায়াত বাদে আলোচনার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে অন্য দলগুলোকেও নতুন জোটে নেওয়া হবে। বাম দলগুলো নতুন জোট বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে না গেলেও গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের দাবিতে রাজপথে থাকবে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মান্না গণমাধ্যমের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলবেন এবং ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিসহ বক্তব্য তুলে ধরবেন।আজ মঙ্গলবার নতুন জোটের নেতারা কর্মসূচিসহ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসবেন। মাহমুদুর রহমান মান্না আমাদের সময়কে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় বৈঠকে বসবেন। উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় এ বৈঠক হবে। গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন ছাড়া শীর্ষপর্যায়ের সব নেতারই এ বৈঠকে থাকার কথা রয়েছে।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের পর নেতাদের এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। ড. কামাল হোসেন নিজ চেম্বারে গত রবি ও সোমবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এ ছাড়া গত রবিবার রাতে ফ্রন্টের নেপথ্যে থাকা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বারিধারার বাসায় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চা চক্রে মিলিত হন। সেখানে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও তার স্ত্রী তানিয়া রব, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুরও অংশ নেন।অন্যদিকে, ওই রাতেই কর্নেল (অব) অলি আহমেদের মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায় যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন নেতা। তারা হলেন মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান।এদিকে ‘মুভমেন্ট ফর জাস্টিস’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নিরুর নেতৃত্বে আগামীকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কর্মসূচি করা হবে। এতে ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের থাকার কথা রয়েছে। আইনজীবীদের একটি জোট গঠন নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তা ছাড়া মহাসমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ প্রতিটি পেশার মানুষকে নিয়ে একটি করে ফ্রন্ট, আবার সব ফ্রন্ট নিয়েও পেশাজীবীদের বৃহত্তর ফ্রন্ট করার চেষ্টা চলছে।জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, আমরা তো সব গণতন্ত্রমনা মানুষ ও দলকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে চাই। যে উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আশা করি, সফল হব।