রাফিয়ার সঙ্গে সেলফিতে মেতে ওঠে
রাফিয়া আফরিন কানিজ। সদর উপজেলার ঝিলংঝা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ঝিরঝিরি পাড়ার দিনমজুর আবদুল করিমের মেয়ে রাফিয়া (১০) এক সংগ্রামী। অভাবের কারণে মাত্র ৯ বছর বয়সেই সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে শিশুটি। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি সে সৈকতের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঝিনুক বিক্রি করে। আর সেই আয় দিয়ে চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে রাফিয়ার জীবনে এলো ফেসবুক!
সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয় রাফিয়ার মায়াবি হাসির ছবি। কেউ একজন রাফিয়ার সেই ছবি ফেসবুকে দেয়ায় সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে হলিউড-বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এসব নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে লিখছেন, কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার ক্যাটরিনা? অথবা কার হাসি বেশি সুন্দর ইত্যাদি।
রাফিয়ারা দুই ভাই, দুই বোন। তাদের মধ্যে রাফিয়া মেজো, বড় ভাই আবদুল্লাহ্ নবম শ্রেণিতে পড়ে। রাফিয়া কলাতলির সৈকত প্রাইমারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার মা রহিমা বেগম গৃহিণী।
রাফিয়ার মা রহিমা বেগম জানান, রাফিয়ার বাবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার ও অসুস্থ থাকায় রাফিয়া প্রতিদিন সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে যা আয় করত তা দিয়ে চলত তাদের সংসার। রাফিয়া গত এক সপ্তাহ যাবত ঝিনুক বিক্রি করতে না পারায় গত দুইদিন ধরে তাদের বাড়িতে চাল, ডাল কিছুই নেই।
তবে অবুঝ মেয়ে রাফিয়া এসব কিছু মানতে রাজি নয়। সে তার বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে আবারও ঝিনুক হাতে ফিরতে চায় সৈকতে।
ছবি ভাইরালের পর শত বাধা পেরিয়ে স্কুলে ফিরেছে সংগ্রামী রাফিয়া আফরিন কানিজ।
শনিবার (২৩ মার্চ) বেলা ১১ টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত তার স্কুল কক্সবাজারের কলাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করেন রাফিয়া।
রাফিয়া বলে, ফেসবুক কি আমি বুঝি না, চিনিও না। তবে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমাকে আর আমার পরিবারকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আমি পড়তে চাই। বাবার চিকিৎসা করাতে চাই, সংসার চালাতে চাই। আর এসব করতে গেলে আমাকে আগের মত ঝিনুক বিক্রি করতে সাগরে যেতে হবে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।
রাফিয়া বলেন, ‘আমি ব্যাংকার হতে চাই। আমার স্বপ্ন আমি ভঙ্গ হতে দেব না। তাই আমি আজ থেকে প্রতিদিন স্কুলে আসব। পড়াশোনা চালিয়ে যাব ইনশাল্লাহ।’