নিবন্ধন হারানো দল জামায়াত ইসলামীর সংস্কারপন্থীদের নতুন মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে আগামী ২৭ এপ্রিল। ইতোপূর্বে দলটির ভেতরে সংস্কারের দাবি তুলে সম্প্রতি যারা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন অথবা বহিষ্কার হয়েছেন, তারাই এই নতুন প্ল্যাট ফর্মের উদ্যোক্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা গত কয়েক মাস ধরে নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করে আসছিলেন। এই গ্রুপটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় নতুন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হবে আগামী ২৭ এপ্রিল।
নতুন এই প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর জন্য ঢাকা থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের সংস্কারপন্থী নেতা ও ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু। আর দেশের বাইরে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের সাবেক সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
এই দুই জনের মধ্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জামায়াতকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরমর্শও দেন তিনি। পাশাপাশি জামায়াতের রাজনীতিতে আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে দীর্ঘ অভিমত তুলে ধরেন লিখিতি বিবৃতিতে।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ওই ‘মত’ প্রকাশ্যে সমর্থন করায় দল থেকে বহিষ্কার হন শিবিরের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের শীর্ষ নেতা মুজিবুর রহমান মঞ্জু।
জানা গেছে, এই মুজিবুর রহমান মঞ্জু-ই সংস্কারপন্থীদের সংগঠিত করে জামায়াতের বিকল্প একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। তার প্রাথমিক ‘অ্যাক্টিভিটিস’ হিসেবে সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের স্মরণে গত ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক শোকসভা আয়োজন করা হয়। ওই স্মরণসভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনসহ বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন। মুজিবুর রহমান নিজেই সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানটি।
ঢাকায় মঞ্জুর এই প্রোগ্রামের ১৫ দিন পর শুক্রবার (১২ এপ্রিল) লন্ডনের ওসবর্নে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে জমকালো সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আবদুর রাজ্জাকের আইন পেশার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা—যারা প্রত্যেকেই এক সময় জামায়াতের রাজনীতি করতেন।
সূত্রমতে, ঢাকা ও লন্ডনে আয়োজিত সংস্কারপন্থীদের ওই দু’টি প্রোগ্রাম ছিল জামায়াতের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির মহড়া। ঢাকায় নির্বিঘ্নে প্রোগ্রাম করার সুযোগ পেয়ে জামায়াতের সংস্কারপন্থীরা নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ বা প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য বর্তমান সময়টাকে নিজেদের জন্য অনুকূল মনে করছেন। ওই কারণেই ২৭ এপ্রিল দিনটাকে তারা নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ঘোষণার তারিখ হিসেব বেছে নিয়েছেন।
তবে ঢাকার কোনো ভেন্যুতে তারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন—এই তিনটি ভেন্যুর যে কোনো একটিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে এ প্রোগ্রাম।
অবশ্য নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতের সংস্কারপন্থী নেতা মুজিবুর রহমান মঞ্জু কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য শিবিরের সাবেক সভাপতি ইহসানুল মাহবুব জুবায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমি অথেন্টিক পারসন নই। কে কোথায় কোন প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাচ্ছেন, সে বিষয়ে তিনিই কথা বলবেন। আর যদি বিষয়টি জামায়াত রিলেটেড হয়, তাহলে দায়িত্বশীল নেতারা কথা বলবেন।’
জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ারকে ফোন দিলে তিনিও এ বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ ) জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংস্কারপন্থীদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জামায়াত ওয়াকিবহাল।’ সংগঠনের কোনো পর্যায়ের কোনো নেতা-কর্মী যেন এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারেন, সে জন্য দলটির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এরআগে, ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এরপর ২০০৯ সালে দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিলের রায় দেন হাইকোর্ট।