শরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির বি-ব্লকের ১৫ নং প্লটে অবস্থিত ‘প্রিন্স রিসোর্ট’ নামে হোটেল। দুইতলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করে এখানে হোটেল ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন জনৈক আরিফ। এখন সেখানে ১০-১৫ জন শ্রমিককে প্রতিদিন প্রকাশ্যে তিনতলার নির্মাণের কাজ করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে ভবনের মালিক আরিফ বলেন, ‘গণপূর্ত ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লিখিত কোন অনুমোদন নেই। তবে সবাই অফিসের সঙ্গে সর্ম্পক রেখে যেভাবে মৌখিক অনুমতি নিয়ে কাজ করছে, আমিও সেভাবে করছি।’
একই ব্লকের ১৮ নং প্লটেও চলছে তৃতীয়তলার নির্মাণ কাজ চলছে। ‘হামদান কটেজ’ নামের এ হোটেলের মালিক শহিদুল হক নামের এক ব্যক্তি। প্রতিদিন প্রকাশ্যে ১৫-২০ জন নির্মাণ শ্রমিক পুরোদমে কাজ করছেন। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে শহিদুল হক বলেন, ‘কউক (কক্সবাজার উন্নয়ন কর্পোরেশন) একবার নিষেধ করেছিল। এছাড়া ভবনটির মালিক আমি নই।’
বি-ব্লকের ৭নং প্লটেও দুইতলা থেকে চার তলা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওই ভবনটিতে ‘ড্রিম গেস্ট ইন’ নামে অভিজাত হোটেল খুলে ব্যবসা চালাচ্ছেন দিদার নামের এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে দিদার বলেন, ‘আমাদের কাগজপত্র সব ঠিক আছে। এছাড়া ভবনটি আমি সংস্কার করছি মাত্র।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বি-ব্লকের এই প্লটগুলোর মালিক কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ।
শুধু এই তিনটিই নয়, কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের সীমানা দেওয়ালের পাশে বিভাগের জমিতে এভাবে গড়ে উঠছে একাধিক বহুতল ভবন। আইনত যা সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপরও প্রতিদিন প্রকাশ্যে গণপূর্ত বিভাগের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছে। কিন্তু এ রোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্তবিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্যরা গণপূর্তের জমিতে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। যার কারণে সেখানে এখন আর খালি জায়গা নেই বললেই চলে। প্রথমে একতলা, দুইতলা করে, পরে তিন থেকে চার তলা পর্যন্ত ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে ওই এলাকায়। এভাবে গণপূর্তের জমিতে শতাধিক ভবন নির্মান করে হোটেল ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সরকারি জমিতে এসব হোটেল নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের ঘুষ পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে দিন দিন সরকারি এসব জমি বেহাত হয়ে গেলেও তা উদ্ধার বা প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এমনকি খোদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও এক্ষেত্রে অদৃশ্য কারণে চুপ রয়েছে। অথচ এসব ভবন নির্মাণে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন নকশার অনুমোদন ও ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র নেই।
গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের পাশে কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ১৯৯৯ সালে শরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে প্রায় ৬ একর জমি বরাদ্দ দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২০০৯ সালে ওই বরাদ্দ বাতিল করে মন্ত্রণালয়। এছাড়া এর মধ্যে শরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর নামে কোন লীজ সম্পাদনও হয়নি। এ অবস্থায় শরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি বরাদ্দ বাতিলের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গণপূর্তের জমিতে স্থাপনা নির্মান করে রমরমা হোটেল ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে একটি চক্র। আর নেপথ্যে খোদ গণপূর্ত বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা এতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সেখানে এভাবে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে তা আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কাজ শুরু করছি।’
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকটের কারণে অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযানের নির্দেশ দিচ্ছি।’
One thought on "গণপূর্তের জমিতে থামছে না বহুতল ভবন নির্মাণ"
Comments are closed.