1. arif.arman@gmail.com : Daily Coxsbazar : Daily Coxsbazar
  2. dailycoxsbazar@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  3. litonsaikat@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  4. shakil.cox@gmail.com : ডেইলি কক্সবাজার :
  5. info@dailycoxsbazar.com : ডেইলি কক্সবাজার : Daily ডেইলি কক্সবাজার
ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ উপেক্ষিত - Daily Cox's Bazar News
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন
নোটিশ ::
ডেইলি কক্সবাজারে আপনার স্বাগতম। প্রতি মূহুর্তের খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
সংবাদ শিরোনাম ::
কট্টরপন্থী ইসলামী দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ: এসএডিএফ কক্সবাজারের আট তরুণ তরুণীকে ‘অদম্য তারূণ্য’ সম্মাননা জানাবে ঢাকাস্থ কক্সবাজার সমিতি Job opportunity বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়না, নাকি স্বপ্নের দেশ! আল-আকসা মসজিদে ইহুদিদের প্রার্থনা বন্ধের আহ্বান আরব লীগের পেকুয়ায় পুলিশের অভিযানে ৮০ হাজার টাকার জাল নোটসহ গ্রেফতার-১ পেকুয়ায় অস্ত্র নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল : অস্ত্রসহ আটক শীর্ষ সন্ত্রাসী লিটন টেকনাফে একটি পোপা মাছের দাম হাঁকাচ্ছেন সাড়ে ৭ লাখ টাকা ! কক্সবাজারের টেকনাফে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবাসহ আটক-১ নিউ ইয়র্কে মেয়র কার্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে কনসাল জেনারেলের আলোচনা

ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ উপেক্ষিত

ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ মে, ২০১৯
  • ৩৩১ বার পড়া হয়েছে

ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানো

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশের মধ্যে বা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ এখনও উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য গত বছরের ১৪ মে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সে নির্দেশ অনুযায়ী তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ঋণের সুদের হার কমাতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। এর ফলে হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংকে সুদ হার কিছুটা কমে এলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আমানত সংকটের অজুহাত তুলে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ঋণের সুদ।

ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করছে এখন ৮ থেকে ১১ শতাংশ সুদে। এতে কস্ট অব ফান্ড বা তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে বাস্তবায়ন এক রকম তামাশায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে বেসরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংকে ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের উপরে রয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকে এ হার ১২ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। ভোক্তা ঋণে ১৮ শতাংশ নিচ্ছে। এছাড়া তারল্য সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক গ্রাহকের এলসি পর্যন্ত খুলতে পারছে না।

ব্যাংকগুলোর এ অবস্থার মধ্যেও নতুন মেয়াদে টানা তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের পর ব্যবসায়ীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেছেন ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য অর্থমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

এরপর বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও একাধিকবার বলেছেন, ঋণের সুদ হার কমাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর এমন সব নির্দেশের পরও ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ হার কমায়নি। বরং বাস্তবতা হচ্ছে, এখন কমার পরিবর্তে ঋণের সুদ হার আরও বাড়তে শুরু করেছে। দেশে বিনিয়োগ কর্মসংস্থানের স্বার্থে সরকারের উচ্চপর্যায়ে এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো কেন গড়িমসি করছে তা কারও কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।

উল্টো ব্যাংকের পরিচালনা ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে। রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর জোরালো হস্তক্ষেপ ছাড়া এর সমাধান মিলবে না।

এদিকে ব্যাংকিং খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে ঋণের সুদ হিসাব পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি এখন কাজ করছে। কমিটি ব্যাংক ঋণের বিপরীতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের পরিবর্তে সরল হারে সুদ আরোপের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। তারা মনে করছে, এতে ঋণের সুদ হার কিছুটা হলেও কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঋণের সুদ হার কমাতে হলে অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করতে হবে। যেমন- ব্যাংকগুলো বর্তমানে চাকচিক্য প্রদর্শন করতে বেশি খরচ করে। এ খাতে খরচ কমাতে হবে। বেতন-ভাতা, পরিচালকদের পেছনেও অনেক অর্থ ব্যয় হয়। এগুলোও কমাতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে দুর্নীতি। এসব সমন্বিত উদ্যোগ নিলে ঋণের সুদ হার কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার কমানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। কেননা খেলাপি ঋণ কমে গেলে ব্যাংকগুলোর তহবিল আটকে থাকার পরিমাণও কমে যাবে। তখন ব্যাংকের বিনিয়োগ যোগ্য তহবিলের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি কমে যাবে কস্ট অব ফান্ড। ফলে ঋণের সুদ হার কমতে থাকবে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো ৬ মাস মেয়াদি আমানত সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে নেয়ার কথা। এর বিপরীতে ঋণ দেয়ার কথা ৯ শতাংশ সুদে। বাস্তবে ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ১১ শতাংশ সুদে আমানত নিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে। তারল্য সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদ হার বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে আমানতের সুদ হার ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। এখন তা বেড়ে ৮ থেকে ১১ শতাংশে উঠেছে। সরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংক ৫ থেকে ৭ শতাংশ সুদে আমানত পাচ্ছে। এর বাইরে প্রায় সব ব্যাংকেই আমানতের সুদের হার বেড়ে গেছে।

এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে আমানত নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চড়া সুদে আমানত নেয়ার কারণে তাদের কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদ হার। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে গড়ে ঋণের সুদ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ থেকে ১৬ শতাংশ। ভোক্তা ঋণে ১৮ শতাংশ সুদ নিচ্ছে।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতে কয়েকটি ব্যাংক রীতিমতো পাল্লা দিয়ে আমানত সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে। ৯ থেকে সাড়ে ৯ সুদে আমানত সংগ্রহ করছে। অবস্থা এমন যে, পারলে ১০ শতাংশ সুদেও আমানত নিতে চায়।

ধানমণ্ডি এলাকায় জনৈক বাসিন্দা গত সপ্তাহে বেসরকারি একটি ব্যাংকে ডাবল বেনিফিট স্কিমে ২০ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জানান, দুটি ব্যাংকের দু’জন পদস্থ কর্মকর্তা এ আমানত নেয়ার জন্য অন্তত ১৫ দিন তদবির করেছেন। তাদের চাকরির পদোন্নতির শর্ত হিসেবে আমানত বাড়ানোর টার্গেট বেঁধে দেয়া হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কখনও ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পারবে না।

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড কমাতে হবে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিলে ব্যাংকগুলোর ৩ শতাংশ মুনাফা থাকবে। এ মুনাফা দিয়ে তারা খুব সহজে পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করতে পারবে। যদিও দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে ঋণের সুদ হার ৭-৮ শতাংশের মধ্যে বেঁধে ফেলা প্রয়োজন।

ঋণের সুদ হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগেই সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। এ লক্ষ্যে গত বছরের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণবভনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সভায় তিনি ব্যাংক ঋণের সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দেন।

ওই সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

তাকে উদ্দেশ করেই প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। বাংলাদেশ ব্যাংক নানা ধরনের বিচার-বিশ্লেষণ ও ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে এ হার কমানোর উদ্যোগ নেয়। এর আলোকে গত বছরের ২০ জুন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভায় সব ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশে এবং আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। সুদের এ হার তারা গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা জানায়।

কিন্তু ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত সরকারি চার ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই কার্যকর করেনি। এক মাসের মধ্যেও সুদ হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় গত বছরের ২ আগস্ট তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠক ডাকেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ (২ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ এবং ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশ হবে।’

এই সিদ্ধান্ত গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে কার্যকর করার কথা। কিন্তু ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত কার্যকর তো হয়নি, বরং ঋণের সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। ওই সময়ে ঋণের সুদের হার কমাতে ব্যাংকগুলো কতটুকু উদ্যোগী হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত করে। ওই তদন্তে দেখা যায়, ৩৮টি ব্যাংক সুদের হার কমায়নি। সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমেছে সরকারি ৮ ও বেসরকারি ২ ব্যাংকে। ইসলামী ৭ ব্যাংকে বছর শেষে বিনিয়োগের নতুন হার নির্ধারিত হবে বলে তারা আগাম ঘোষণা দেয়নি। বিদেশি ৯ ব্যাংকও সুদহার কমায়নি।

৩১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্পমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। ব্যাংকের ব্যাপারটা আমরা দেখছি। কয়েকদিন আগে আমরা বসেছিলাম, কীভাবে ব্যাংকের সুদের হার কমানো যায়। আমরা চেষ্টা করেছি। একবার উদ্যোগ নিলাম, সঙ্গে সঙ্গে কথাও বললাম। বেশকিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। যেমন- আগে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৭০ ভাগ অর্থ সরকারি ব্যাংকে, ৩০ ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হতো।

ব্যাংক মালিকরা বললেন, এটা যদি ফিফটি-ফিফটি করে দেয়া হয়, তাহলে আমরা ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনব। সেটাও করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম এবং দিলাম। কিছু ব্যাংকে ঠিকই সুদের হার ৯ শতাংশে নামানো হল, কিন্তু সবাই তা করল না। বাড়াতে বাড়াতে ১৪, ১৫, ১৬তে নিয়ে গেল। কেন করল না তাদের এই সুযোগ দেয়া সত্ত্বেও?’

সম্প্রতি এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, একটি বিষয় সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হারের মতো পৃথিবীর কোনো দেশে এত বেশি সুদহার নেই। এই সুদহার ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এত বেশি সুদ দিয়ে কোনো দিন শিল্পকারখানা টিকে থাকতে পারে না। আমি নিজেও একসময় ব্যবসায়ী ছিলাম। আমারও কিছু কারখানা ছিল। আমি নিজেও সুদ দিতে পারিনি। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুদ দিতে পারে- এমন নজির থাকে না। কারণ হচ্ছে- সুদের হার বেশি ও ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা।

বিএবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি ব্যাংকের এমডিরা বাস্তবায়ন করবেন। এদিকে এমডিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়টি নীতি-নির্ধারণীর অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে এমডিরা কিছুই করতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে। পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না বলে এটি কার্যকর হচ্ছে না।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের নির্বাহীরা ঋণের সুদের হার কমানোর বিষয়ে পর্র্ষদে প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। পর্ষদ সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। সব ব্যাংকেরই পর্ষদের বৈঠকের কার্যবিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদের কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সব ব্যাংকের পর্ষদেই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এর ভিত্তিতে সুদের হার কিছুটা কমানো হয়েছে।

কিন্তু সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে বেশির ভাগ ব্যাংকের নির্বাহী ও পর্ষদ সদস্যরা এর বিরোধিতা করেছেন। তারা বলছেন, এখনই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আরও সময় নিয়ে এটি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের কমাচ্ছে না। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে ১ এপ্রিল একটি চিঠি দিয়েছে। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ওই চিঠিতে ঋণের সুদের হার কমাতে কম সুদে ব্যাংকগুলো তহবিলের জোগান, ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা বিধিবদ্ধ আমানতের হার কমানো, কর্পোরেট করহার কমানো, সরকারি তহবিলের অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে আরও বেশি হারে রাখার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ঋণের সুদ বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদেরকে বিদেশে প্রতিযোগিতা করতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, জরুরি ভিত্তিতে ঋণের সুদের হার কমানো উচিত।

এদিকে জাপান, ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোয় ব্যাংকে আমানত রাখলে ব্যাংক কোনো সুদ দেয় না গ্রাহককে। উল্টো গ্রাহকের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ কেটে রাখে। কিন্তু বাংলাদেশে আমানত সংগ্রহ করতে গ্রাহকদের উচ্চ সুদ দিতে হয়। এ পদ্ধতির পরিবর্তন করতে ব্যাংকগুলো তহবিল ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা অর্জন এবং তহবিল সংগ্রহে বহুমুখী ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

শেয়ার করুন

One thought on "ব্যাংকগুলোতে নির্দেশ উপেক্ষিত"

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2020 Dailycoxsbazar
Theme Customized BY Media Text Communications