ডেইলি কক্সবাজার ডেস্ক :
বাংলাদেশে একসময় ব্যানার ও সাইনবোর্ড লেখার কাজ করতেন শৌখিন বা পেশাদার শিল্পীরাই। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই চোখে পড়তো তাদের দোকান।
কখনো দোকান আবার কখনো বা অন্য কোন দেয়ালে কাপড় টাঙ্গিয়ে রং তুলি দিয়ে ব্যানার লেখার দৃশ্য নিয়মিতই দেখা যেতো।
কিন্তু এখন আর তা দেখা যায়না। বরং মফস্বল থেকে রাজধানী শহর সর্বত্রই আর্টের দোকানের পরিবর্তে গড়ে উঠেছে ডিজিটাল সেন্টার।
আর এভাবেই এখন বিলুপ্তির পথে রং তুলিতে ব্যানার লেখার চর্চা।
ঢাকার বকশীবাজারের কাছে হোসনী দালান রোডের একটি ব্যানার লেখার দোকানে গিয়ে দেখা গেলো একটি হোটেলের পতাকায় রং তুলি দিয়ে লিখছেন আর্টিস্ট মো: হানিফ পাপ্পু।
এক সময় চলচ্চিত্রের ব্যানার লিখতেন তিনি। পরে অন্য ব্যানার লেখার কাজ শুরু করেছিলেন। অর্ডারও আসতো অনেক।
কিন্তু এখন ব্যানার বা সাইনবোর্ড আর হাতে লেখার খুব একটা সুযোগ মেলেনা তার।
৪৫ বছরের অভ্যাসবশত দোকান বসেন আর মাঝে মধ্যে অর্ডার পেলে রং তুলি হাতে নিয়ে ব্যানার লেখার কাজ করেন।
সাথে রোজগারের জন্যে শুরু করেছেন স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ।
মিস্টার হানিফ বলছিলেন একটি সাধারণ মাপের ব্যানার হাতে লিখতে কমপক্ষে দু ঘণ্টা সময় লাগে।
আর তার দোকানের পাশের দোকানটির নাম কালার টাচ।
তার সামনেই লেখা আছে ২৫ মিনিটেই ডিজিটাল ব্যানার প্রিন্ট করা হয়। দোকানটির মালিক সৈয়দ আলী আকবর সেন্টু বলছেন রং তুলি দিয়ে লেখার পাট চুকিয়েছেন আরও সাত বছর আগেই।
“আগের একটা ব্যানার লিখে পাঁচশ টাকা পেতাম। এখনো তাই। বরং আগের চেয়ে বেশি রংয়ের ব্যবহার করে কাজ করি ডিজিটাল ব্যানারে। ভালোই চলছে”।
মিস্টার আকবরের দোকানের ভেতরে দেখা গেলো অনেকগুলো কম্পিউটারে কাজ করছেন অনেকে।
কোনটিতে ব্যানার, কোনটিতে পোস্টার আবার কোনটিতে ঈদ কার্ডের ডিজাইন করা হচ্ছে।
তিনি বলছেন একসময় তার দোকানের উল্টো দিকেই কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশাল দেয়াল ধরে প্রতিদিন বহু শিল্পীর তুলিতে লেখা হতো অন্তত পাঁচশ ব্যানার। আর এখন পাঁচটি ব্যানারও লেখা হয়না একদিনে।
মিস্টার আকবরের মতো সবাই হাতে লেখা বাদ দিয়ে পুরাদস্তুর ডিজিটাল হয়ে উঠতে পারেননি এখনো। কেউ কেউ ডিজিটাল ব্যানারর পাশাপাশি ধরে রেখেছেন পুরনোটাও।
নীলক্ষেত হকার্স মার্কেটের এম এস সাইন-এর সত্ত্বাধিকারী আব্দুল মতিন বলছেন, “আমরা হাতের কাজ জানি। কিন্তু এর চাহিদা কমছে। আগে প্রতিদিন প্রতিদিন ৫/৭ টা পেতাম। আর এখন দুদিনেও হয়তো একটা আসেনা”
পরিস্থিতি বুঝে মিস্টার মতিন স্ক্রিন প্রিন্ট সহ ডিজিটাল ব্যানারেও কাজেও হাত দিয়েছে হাতে লেখার পাশাপাশি।
আবার নীলক্ষেতেই গাউসুল আজম মার্কেটে রীতিমত জেঁকে বসেছে ডিজিটাল ব্যানার সাইনবোর্ডের দোকান আর কারখানার পসরা।
তিনি বলেন, “ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন সবই করছি। ডিজাইন করে প্রিন্ট করতে হয়। একই খরচে আরও ভালো জিনিস হয়”।
আর এভাবেই কম্পিউটার, প্রিন্টিং মেশিন, ডিজাইনের মতো ডিজিটাল শব্দগুলোর মধ্যে ক্রমাগত হারিয়ে ব্যানার বা সাইনবোর্ড হাতে লেখার বিষয়টি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে।
সুত্র-