জোট বেঁধে একই ব্যানারে কার্যক্রম চালাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন জঙ্গি সংগঠন। দেয়া হয়েছে নতুন নাম ‘দাওলাতুল ইসলাম’। এই তিন জঙ্গি সংগঠন হচ্ছে—জামাআতুল মুজাহিদীন (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) ও হিযবুত তাহরীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে ভেঙে পড়া এই উগ্রপন্থি সংগঠনগুলোর সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সদস্যরা একই ব্যানারের নিচে সুসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সবকিছুই চলে এই মাধ্যমে। এরই মধ্যে গুলশানের হলি আর্টিজান, শোলাকিয়াসহ বেশ কিছু জায়গায় তারা হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর গাবতলী ও মিরপুরে র্যাবের হাতে ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নতুন করে সুসংগঠিত হতেই জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ও হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা মিলে গড়েছে এই আত্মঘাতী সংগঠনটি। গুলশান-শোলাকিয়াসহ এমন ১১টি হামলা চালিয়েছে দাওলাতুল ইসলাম নামের নতুন এ সংগঠনটি। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় রোমহর্ষক জঙ্গি হামলা ও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে অন্যান্য আলামতের সঙ্গে একটি রুমাল উদ্ধার করা হয়েছে। সাদা কাপড়ের এই রুমালে বাংলায় কালো অক্ষরে লেখা রয়েছে, ‘দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ টিকে থাকবে’।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সমন্বয়ে দাওয়াতুল ইসলাম নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠন গঠন করা হয়েছে। এর সঙ্গে জেএমবি, হিযবুত তাহ্রীর ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি আরো জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। তাই নতুন করে সুসংগঠিত হতেই তারা একই ছাদের নিচে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেসবুক ও কিছু অ্যাপসের সাহায্যে চলে দাওলাতুল ইসলামের সদস্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় কর্মকাণ্ড। এ কাজে ব্যবহৃত ছদ্মনাম অ্যাপস পাসওয়ার্ড আর প্রয়োজনীয় অর্থের জোগানও দেয় সংগঠনটি। তিন ধাপের এই প্রস্তুতি পর্বের পুরোটাই চলে একজন আমিরের তত্ত্বাবধানে। সদস্য সংগ্রহে শুরুতেই ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে দাওয়াত পাঠানো হয়। আবার মুসলিম ছাড়াও অন্য ধর্মের লোকজনের নামেও খোলা হয় কিছু ভুয়া আইডি। পরের ধাপে ফেসবুক বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপস এ পর্যায়ক্রমে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এই অ্যাপসে যাওয়ার জন্য তারা সতর্কতা হিসেবে কিছু সাংকেতিক ভাষাও ব্যবহার করে। এর মধ্যে টেলিগ্রাফ নামের অ্যাপস বেশি ব্যবহার হতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় ধাপের এই সময়ে আমিরের ডাকে ঘরসংসার ছেড়ে হিজরতের জন্য প্রস্তুত করা হয় সদ্য সংগ্রহ করা জঙ্গিদের। আর আমিরের সঙ্গে প্রতিদিনের যোগাযোগ বাধ্যতামূলক রাখা হয়। কোনো কারণে একদিন যোগাযোগ না হলে পুলিশের হাতে ধরা পড়া কিংবা অনাগ্রহী ভেবে তাকে বাদ দেয়া হয় যোগাযোগের মাধ্যম থেকে। তৃতীয় ধাপের যোগাযোগ হয় নতুন অ্যাপস ট্রিমাতে যা মূলত কোনো অভিযান পরিকল্পনা কিংবা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। বিদেশি মুদ্রায় এই অ্যাপস ডাউনলোডের খরচ যোগাযোগের ছদ্মনাম পাসওয়ার্ড সবই দেয়া হয় সংগঠন থেকে। কোন কাজ কখন করতে হবে তার নির্দেশনা একমাত্র আমিরই দিয়ে থাকেন। হামলার অন্তত চার দিন আগে ২ থেকে ৫ জনের একটি আত্মঘাতী দলকে নির্ধারিত জায়গায় যেতে বলা হয়। সেখানে তাদের নতুন নামও দেয়া হয়, যা জানেন শুধু আমির নিজেই। মিশনের আগ মুহূর্তে ছদ্মনামধারী আরো একজন যুক্ত হন তাদের সঙ্গে যেখানে তিনি আত্মঘাতীদের সঙ্গে এক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করে দু-একজনকে চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়ে চলে যান এলাকা ছেড়ে। অন্যদের বলা হয় নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অনুসরণ করে যেতে। কিন্তু এ সংগঠনটির আমির কে তা এখনো নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, দাওলাতুল ইসলামের কে নেতৃত্ব দিচ্ছে তার সন্ধানের চেষ্টা চলছে। কয়েকজনের নাম শোনা গেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে জেএমবি এবং এবিটি দাওলাতুল ইসলাম নামের ব্যানার ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি র্যাবের হাতে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা এই ব্যানারে হলি আর্টিজানসহ ১১টি হামলা ও তার দায় স্বীকার করেছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া জঙ্গি কার্যক্রমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা থ্রিমা, ইমো ও টেলিগ্রাম অ্যাপস ব্যবহার করে থাকেন বলেও তিনি জানান।