চট্টগ্রাম মহানগর ও ১৪ উপজেলার কুরবানী পশুর অবৈধ হাটের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে গেছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে গঠিত হচ্ছে দুটি মোবাইল কোর্ট। একটি থাকবে উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই পর্যন্ত, অন্যটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী-লোহাগাড়া পর্যন্ত। মহানগরে প্রতিদিন মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম। এর সঙ্গে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছরই কুরবান এলে একশ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তি যত্রতত্র অবৈধভাবে কুরবানীর পশুর বাজার বসায়। রাস্তার ধারে, পথে, ফুটপাতে, আবাসিক এলাকার সড়কে, খালের পাড়ে, বিদ্যালয় মাঠে, খোলা স্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় বসানো হতো পশুর অবৈধ হাট। ফলে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরাশন (চসিক) হারায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। আর্থিক ক্ষতিতে পড়েন বৈধ ইজারাদাররা। তৈরি হয় চরম এক বিশৃঙ্খলা। পশু আবর্জনায় নষ্ট হয় পরিবেশ।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম জেলা ও নগরে অবৈধভাবে পশুর কোনো হাট বসতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে যত তদবির আসুক, সবই আমি দেখব। কোথাও খুব বেশি জরুরি হলে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করবে। পরে আমরা সেটি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। তিনি বলেন, কোনো ইউএনও যদি অনুমতি দেন তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব। আর ইউএনও যদি রাজনৈতিক তদবির কিংবা সমস্যার কারণে অবৈধ হাট উচ্ছেদ করতে না পারেন, সেটিও আমি দেখব।
জানা যায়, নগর ও জেলায় পশুর বৈধ হাট আছে ১৪৯টি। এর মধ্যে নগরে চসিকের ইজারাকৃত হাট আছে ছয়টি এবং ১৪ উপজেলায় জেলা প্রশাসন অনুমোদিত হাট আছে ১৪১টি। তবে নগর ও জেলায় প্রায় ১২০টি অবৈধ হাট আছে বলে অভিযোগ আছে। এর মধ্যে উপজেলা ৭৬টি, অন্যগুলো নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসানো হয় বলে জানা যায়।
চসিকের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এখলাস উদ্দিন আহমদ বলেন, নগরে ছয়টি বাজার ইজারা হয়েছে, দুটির ইজারা প্রক্রিয়াধীন। এর বাইরে কোন হাট বসলে সেগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন।
কুরবানী পশুর হাট ইজারাদারদের অভিযোগ, যত্রতত্র পশুর হাট বসলে ক্রেতারা আর বাজারে আসে না। ক্রেতা বাজারে না আসলে কোটি টাকা দিয়ে বাজার ইজারা নিয়ে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ আমরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েই বাজার ইজারা নিয়েছি। এর সঙ্গে আছে প্রতিদিনকার বাজার খরচ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৪ উপজেলায় অবৈধ পশুর হাট আছে ৭৬টি। এর মধ্যে পটিয়ায় ১৪টি, মিরসরাইয়ে ১২টি, সীতাকুণ্ডে ১৫টি, ফটিকছড়িতে নয়টি এবং হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, স›দ্বীপ, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলায় মোট আছে ২৬টি।
অন্যদিকে, নগরের অবৈধ বাজারের মধ্যে আছে: হালিশহর হাউজিং এস্টেট মাঠ, হালিশহর বি-ব্লক মাঠ, মহেশখালের পাড় এলাকায়, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ, সিডিএ অনন্যা আবাসিক এলাকা, অক্সিজেন মোড়, লোহারপুল, আতুরারডিপো, জঙ্গি শাহ মাজার এলাকায়, তুলা কোম্পানির সামনে, ওয়াজেদিয়া রাস্তারর মাথা, বটতলী বাজার, পলিটেকনিক্যাল মোড়সহ একাধিক এলাকায় অবৈধ হাট বসে।
চসিকের স্থায়ী-অস্থায়ী আটটি বৈধ বাজার আছে। এর মধ্যে স্থায়ী দুটি হলো- সাগরিকা ও বিবিরহাট। অস্থায়ী ছয়টি বাজার হলো কর্ণফুলী পশুর হাট, সল্টগোলা রেলক্রসিং পশুর হাট, স্টিলমিল পশুর হাট, হালিশহর কমল মহাজন পশুর হাট, পতেঙ্গা চসিক উচ্চবিদ্যালয় মাঠ (কাঠগড়) পশুর হাট ও পোস্তার পাড় পশুর হাট।