সূর্যবংশীয় রাজা দুস্মন্ত কণ্বতনয়া শকুন্তলাকে ভুলে গিয়েছিলেন বেমালুম। নাম-দাম-পরিচয়-প্রণয় সব। ঋষির অভিশাপে হোক, আর রাজপুরুষের স্বভাব-প্রতারণাধর্মেই হোক- তিনি ভুলেছিলেন। রাজপুরীতে এসে শকুন্তলা তপোবনের মধুময় দিনগুলো রাজাকে একে একে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন। এমনকি বললেন, ‘মনে করে দেখ, একদিন তুমি ও আমি দু’জনে মুকুলিত গাছের নিচে বসেছিলাম। তোমার হাতে একটি জলভরতি পদ্মপাতার ঠোঙা ছিল। আমার প্রিয় হরিণশাবককে তুমি জল পান করাতে চেয়েছিলে!’ তখনও শকুন্তলা নামের কাউকে রাজার মনে পড়ল না।
রাজার মন বলে কথা! আর রাজার মনের খবর কে-বা জানে?
কিন্তু এ যুগ রাজ-রাজন্যের যুগ নয়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের যুগ। কেউ না জানুক, নিজের মনের খবর সবাই জানে। মনের আকাশ, মনের তলানি। যদিও আধুনিক মন বড় জটিল, জীবনের পরিসরও অনেক বিস্তৃত। একজন আধুনিক মানুষের জীবনসংগ্রাম প্রাচীন রাজার চেয়েও ভয়াবহ, কুটিল ও দ্বন্দ্বে ভরা। এক জীবনের সঙ্গে অনেক জীবনের যোগ যেমন রয়েছে, তেমনি বিচিত্র সম্পর্কের মাত্রা ও মাত্রিকতা। নারী-পুরুষের আন্তসম্পর্কও জটিল ও বহুরেখ এবং তা এমনি, কখনও কখনও বহুস্তরীয় মানবমনকে অস্তিত্বহীন বলেও ভ্রম হয়। মানুষ নিজেকেও ভুলে থাকতে চায়, আত্মপ্রতারণার মোড়কে নিজেকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে।
এ-ও জীবনের এক খেলা। জীবনের দাবার ছকে চাল দিতে দিতে জীবনকে পাড়ি দেওয়া। জয় অথবা হার। কিন্তু মানুষ কি জানে কোনটা জয় আর কোনটা হার?
এমনকি মহামহিম রাজা দুস্মন্ত ভুলে থাকা নামের কাঁটায় বিদ্ধ কি হননি যখন-তখন? হয়নি রক্তপাত গভীর গোপনে? হয়েছিলেন, রাজকার্য ছেড়েছিলেন। পথে নেমেছিলেন শকুন্তলার জন্য।
সেকালে রাজার পক্ষেও তা সম্ভব ছিল। কিন্তু একালে?
হায়, স্মৃতি-পিপীলিকা হাঁটে মনের মাটিতে যখন-তখন। ক্লান্ত-ভ্রান্ত কুহক-জীবনে। কঠিন জীবনে।
আজকের মানুষের মাথায় এত বোঝা, এত দায়িত্ব। ব্যস্ততা মুড়িয়ে রাখে সত্তাকে। সময়ের দাসত্ব করে দাস-মানুষ। মানুষ কিসের নেশায় ছুটছে।
চাই, চাই, চাই। তার অনেক কিছু চাই।
মানুষ আজ অনেক কিছু চায় বলে হারায় তার বেশি।
যখন হারায় তখন জানে না। যখন পেছন ফিরে দেখে তখন কাঁদে। কিন্তু কান্না কোনো ফল আনে না।
ভাবুন সেই ভাঙা স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারটির কথা। ইহজীবনে সুরবালা নামের কেউ তার আশপাশে নেই, অথচ জীবনে কীভাবে লেপ্টে আছে জীবন-সুধা সুরবালা।
নায়কের জবানিতেই শুনি।
‘মনের ভিতরে কে বলিল, তখন যাহাকে ইচ্ছা করিলেই পাইতে পারিতে এখন মাথা খুঁড়িয়া মরিলেও তাহাকে একবার চক্ষে দেখিবার অধিকারটুকুও পাইবেনা।…
আমি বলিলাম, তা থাক না, সুরবালা আমার কে।
উত্তর শুনিলাম, সুরবালা আজ তোমার কেউ নয়, কিন্তু সুরবালা তোমার কী না হইতে পারিত।
এ কথা সত্য।’
সত্য বটে। এ জীবন-সত্য সবার জীবনেই আছে বৈকি।
এভাবে কিংবা অন্যভাবে।
তাই স্মৃতি বা বাস্তবে যখন সব বিশ্বসংসার ছেড়ে সুরবালারা কাছে এসে দাঁড়ায়, তখন সুরবালাই হয়ে ওঠে সত্য- বাকি সবটাই মিথ্যা ঠেকে। আর ভাঙা স্কুলের সেকেন্ড মাস্টারটির কথাই সব মানব-হৃদয়ের কথা হয়েই দাঁড়ায়।
‘আমার সমস্ত ইহজীবনে কেবল ক্ষণকালের জন্য একটি অনন্তরাত্রির উদয় হয়েছিল- আমার আয়ুর সমস্ত দিনরাত্রির মধ্যে সেই একটিমাত্র রাত্রিই আমার তুচ্ছ জীবনের একমাত্র চরম সার্থকতা।’
এমনই হয়। জীবন এভাবেই অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
‘নিভ্যা ছিল মনের আগুন, কে দিল জ্বালাইয়া।’
হ্যাঁ, নিভন্ত চুলি্লতে কারা যেন আজ আগুন ঢেলে দিয়েছে। কারা যেন আগুনের বর্শা হাতে সারি সারি দাঁড়িয়েছে।
প্রিয়জনের চিরবিদায়ে পারিবারিক শোকযাপন করছিলাম শহর থেকে দূরে। শাহ আবদুল করিমের উজান দলের উজানে, শাখা সুরমার তীরে। ঠাণ্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছিল বারবার। নদী-হাওরের জলদ বাতাস।
শীত না আসতেই শীতের আমেজ। একটা ঘোরের মধ্যেই ছিলাম। নদী আর নিসর্গে।
তখনি কবি মাহবুব আজীজের ফোন।
ভুলে থাকা নামের ওপরে লেখা দিতে হবে।
আহা ভুলে থাকা নাম! মুহূর্তেই মনের ভেতরে কে ফিসফিস করে বলল, আমি কি ভুলেছি সব?
আমি দুস্মন্ত নই, নই ভাঙা স্কুলের সেকেন্ড মাস্টার।
আমার স্মৃতির চুলি্লতে দাউ দাউ আগুন জ্বলে ওঠে।
আমরা ফিরছি শহরের দিকে। শোকযাপন শেষে। হে শোক, আমি অশোক হবো।
তাকে ভুলেছি আমি, সত্যি ভুলেছি।
তার ছোটখাটো শরীর, মাথাভরা রেশমি চুল।
তার বাম হাতের পাঁচটি আঙুল, তার বাদামি ত্বক।
সোনালি লোম, সুগঠিত দাঁত। মিহি দুটি ঠোঁট।
লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটা। আহ্লাদী ভাব।
আর তার জ্বলন্ত একজোড়া চোখ।
আমি ভুলে গেছি, আমি তারে ভুলে গেছি। নাম মনে নেই, দুর্বল মেধা। স্মরণে রেখেছি মুখ! তাই?
সে কেউ না। কখনও ছিল না কোথাও। সে নেই।
কিন্তু আমার চোখে সে কয়লার আগুন ঢেলে গেছে। আমাকে সে ছুড়ে ফেলেছে সপ্তম আকাশে। আমি এখন তারাফুল। আমি সমুদ্রের নিচে মৃত এক কাঁকড়া। প্রাগৈতিহাসিক কাছিম।
আহা তার ঠোঁটের পাশের তীব্র তিলটি। হ্যাঁ, তার ডান পায়ের পিঠে ছিল একটা কাটা দাগ।
তখন জীবন ছিল কবিতাময়। তখন জীবন ছিল অন্যরকম। তখন জীবন ছিল দুঃখভরা।
কবিতাই দানাপানি। কবিতাই প্রেম-যৌনতা।
প্রেমাংশুর রক্ত চাই। না প্রেমিক না বিপ্লবী। রাজা যায় রাজা আসে। যে তুমি হরণ করো।
প্রতিদিন চিঠি আসে।
আমার চোখে কান্না জমে। আমি কবিতা আওড়াই মুখে, আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে রেখেছ বিপ্লবের সামনে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত আর জীবনানন্দের কবিতা আমার প্রার্থনার গান।
একদিন ডাকপিয়ন এলো। হাতে নীল খামের তিনটি চিঠি। খামের পেছনে সিলের তারিখ। পরপর তিন দিনের।
আমাকে আপনি চিনবেন না, কিন্তু আমি আপনাকে চিনি। কীভাবে জানেন?
চিঠি পাওয়া নেশাতে দাঁড়ালো। মাঝে মাঝে চিঠি আসে না। পোস্ট অফিসে ধরনা দিই। না, আসে না। আসবে না কোনোদিন। আমি আতঙ্কিত।
এক-দুই-তিন দিন। এক সপ্তাহ। চিঠি আসে। আবার বন্ধ হয়ে যায়। আবার আসে।
ভাবছেন কেটে পড়েছি? ভাবছেন না-জানি কী মেয়ের পাল্লায় পড়েছিলে বাবা!
আবার বন্ধ। আসেও।
ভাববেন না আমি আপনার প্রেমে পড়েছি!
আচ্ছা, আপনি চশমা পরেন? যা-ই বলুন খয়েরি শার্টে আপনাকে বেশ মানায়।
আবার।
শোনেন, কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম। খালি পায়ে বরফের ওপর হাঁটছি। আরে মশাই, আপনি তো আমার সঙ্গেই ছিলেন। আমার হাত ধরেছিলেন। মাগো! আপনার হাত যা শক্ত।
আবার।
আচ্ছা কবি, আমাদের কি দেখা হবে না কোনোদিন? আপনার ইচ্ছে করে না? করে? সত্যি বলুন না!…
আজ আপনার কবিতা পড়লাম। আপনার কবিতায় সেক্স এত বেশি কেন? আপনি কি… আমার বান্ধবীরা খেপায় তো তাই বললাম। আপনি আবার মাইন্ড করবেন না।
…জানেন, জানেন কাল সারারাত আপনার জন্য কী করেছি? না থাক। আপনার শুনে লাভ কী?
আমি এই ঠাণ্ডায় মাথায় পানি ঢেলেছি। নিজেকে শাস্তি দিয়েছি। আপনাকে আমি ভুলতে চাই, হ্যাঁ সত্যি আপনাকে আমি ভুলতে চাই। আপনার সঙ্গে আমার কখনও যোগাযোগ হওয়া উচিত ছিল না। কখনোই না।
আর চিঠি আসে না।
আমি তখন ঝরে পড়ছি।
বনভূমি, ওইখানে লম্বালম্বি শুয়ে আছে একজন মানুষ। একজন বিষণ্ন মানুষ। এক তরুণ কবি।
আমি ছায়ার সঙ্গে খেলা করি। ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হয়ে হাঁটি। মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে। আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখব বলে।
আমি তখন যুদ্ধের ময়দানে।
আমার যুদ্ধ ক্ষুধার সঙ্গে। আমার যুদ্ধ মশার সঙ্গে। আমার যুদ্ধ শীতের সঙ্গে। আমার জীবন অনিশ্চিত। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে পৃথকান্ন হয়েছে। একদল ভাইবোন নিয়ে বাবা অসহায়।
কিন্তু আমার বুক পকেটে জোনাকিপোকা। আমার চুলেও সঙ্গীত। দেখা হলো যদি আমাদের দুর্দিনে চুম্বনে চাইব না আমি অমরতা!
কবি আমাকে আজ উস্কে দিয়েছেন।
অন্ধকারে স্তনের ভেতরে যোনির ভেতরে অনন্ত মৃত্যুর মতো মিশে থাকতে চেয়েছি আমি।
কেন আমাকে জাগাতে চাও? কেন?
তোমার সঙ্গে আমার দেখা হলো। সত্যি দেখা হলো।
কিন্তু তোমাকে আমার প্রথম দর্শনে ভালো লাগল না। ভীষণ হ্যাংলা তুমি, শরীরে ও আচরণে। আমি হতাশ হয়েছিলাম। তুমি আহামরি কেউ না!
ওই রাতে আমার ঘুমও হলো না। শেষরাতে আমি কান্না করলাম! কিন্তু আবার দেখা চাই।
হলোও আবার। আবার।
সেই শেষ দেখা।
আমার পাশে শুয়েছিলে বাঁশির মতো বিবসনা।
আমরা পাশাপাশি শুইনি, কিন্তু বসে ছিলাম। পাহাড়ের চূড়ায়। টিলার ঘাসে। আমরা হেঁটেছিলাম।
তোমার প্রেমপ্রার্থীদের কথা শুনে আমার ঘুম হারাম হলো। তোমার রোমিওরা তোমার জন্য মেঘালয় পাহাড় কাটতেও রাজি!
আমার পাশে বসেছিলে, সেই সুখ মাছের ভেতরে ছিল।
আমার হাত ধরেছিলে, সেই সুখ মাছের ভেতরে ছিল।
আমাদের আর দেখা হয় না। তোমাকে আমি বেশ্যা ভাবি। ভাবি তুমি জঘন্য।
তখন মোবাইল ছিল না।
তোমার চিঠিও পাই না।
তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি!
আমাদের ভেতরে ক্রোধ বাড়তে থাকে।
আমাদের ভেতরে ঘৃণার জন্ম হয়।
আমার মনে হয় ভালোবাসব কোনো বেশ্যাকে। ভান নেই। ভনিতা নেই।
একদিন বন্ধুরা মিলে টনিবাজার গেলাম। তোমাকে ভুলতে চাই। আমার প্রেম প্রয়োজন। অনেক প্রেম।
আর আমি অনায়াসেই তোমাকে ডাকাতের হাতেও তুলে দিতে পারি। সত্যি পারি!
কিন্তু আমরা প্রেমে পড়েছি। আমাদের প্রেম না পেল কবির ভাষা। সর্পচূড়ায় আমরা বাঁধি তো বাসা!
আমাদের শেষ দেখা। মরুভল্লুকের মতো শীত নেমেছে আমাদের পাহাড়ি শহরে।
তখন শীতের সূর্য আকাশে তপ্ত হচ্ছে। তুমি পরেছিলে নীল রঙের জামা। পায়ে লাল ক্যাম্বিশের জুতা। আমার মনে আছে।
উত্তরের হাওয়ায় তোমার জর্জেট ওড়না উড়ে গেল সারসের মতো।
রিকশা থামল। আমি নেমে ওড়না নিয়ে এলাম। আমরা ঘুরলাম। কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই। আমরা কেউ কাউকে স্পর্শ করিনি।
একটা শিশিরভেজা টিলায় বসলাম অনেকক্ষণ। আমাদের কথা এগোয় না।
আমরা উঠে পড়ি।
শহরের শেষ বাড়ি তোমাদের। নারিকেল পাতায় ঘেরা। শীতের বাতাসের দাপাদাপি গাছে পাতায় পাতায়।
আমি রিকশা থেকে নামলাম।
কোনো কথা নেই আমাদের মুখে।
আমি বললাম, ভালো থেকো। তুমি হাসলে। বললে, ভালো থেকো।
তোমার রিকশা শহরের শেষ বাড়ির দিকে ধাবমান।
ভালো থেকো ফুল সুগন্ধী বকুল ভালো থেকো।
আমি ভালো আছি, তুমি?
পুরুষ অপেক্ষা করছিলেন নারীর জন্য। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরোনোর পরও নারীর দেখা নেই।
পুরুষ অফিস থেকে নিচে নেমে এলেন। বাইরের লনে এক চৌকস নারী কালো চশমা পরে গাড়িতে বসা। চোখ তার এদিক-ওদিক করছে। চশমার আড়ালে সেই চঞ্চল চোখ আরও তীব্র, আরও কটা।
পুরুষকে দেখে নেমে এলেন তিনি। পুরুষ অভিবাদন জানালেন। নারীর চোখ দুটি স্থির পুরুষের ওপর।
নারী মুখ খুললেন, আপনি আগের মতোই আছেন। বয়স একটুও বাড়েনি।
বাড়তে দিইনি। আপনিও তো তাই।
আমি অনেকক্ষণ হলো এসেছি।
ইটস ওকে।
দরজার পাশে এসে পুরুষ, এই আমার রুম। ইউ আর ওয়েলকাম।
থ্যাঙ্ক ইউ।
দু’জন মুখোমুখি বসলেন।
আপনার রুমটি সুন্দর। ঘোর লেগে যায়।… দেখছি আগের মতোই পড়াশোনা নিয়ে আছেন।
আর তো কাজ নেই।
জানেন, আমার খুব ইচ্ছে। কিন্তু সময় পাই না।
আপনি পড়াশোনা না করে পারবেন না।
তা ঠিক। শুনেছি আপনার স্ত্রী একজন চমৎকার মহিলা। ফেসবুকে ফটোও দেখেছি।
আপনার স্বামীও বেশ হ্যান্ডসাম।
ও আমাকে খুব বোঝে।
ও-ও অসাধারণ। একটু কফি করি? আপনি তো পছন্দ করেন খুব।
মনে আছে দেখছি!
এখানেই করবেন? আমি করি!
আপনি তো মেহমান।
মে-হ-মা-ন! হুম, তাই তো? তারপর, চিনি একটু কম প্লিজ।
কেন, ডায়াবেটিস?
আরে না। দেখছেন না কেমন মুটিয়ে যাচ্ছি?
নাহ, আপনি ঠিকই আছেন।
আমি দেশে এসেছি এক সপ্তাহ হলো। কালই চলে যাচ্ছি।
কালই যাচ্ছেন?
হুম, একা এসেছি তো। ও আসতে পারেনি!
মাত্র তো ক’দিন। আপনার বাচ্চাগুলো চমৎকার! পুতুলের মতো।
আপনার যাওয়া পড়ে না ওদিকে, মানে পশ্চিমে? খুব তো ঘোরেন দেখলাম!
যাইনি, যাবো!
আমাদের শহরের নাম জানেন?
জানি! ওই শহরের ফিসপন্ড এলাকায়, পার্কের ঠিক ডানে আপনার বাড়ি।
একদম ঠিক বলছেন।
এভাবে পুরুষ ও নারীটির কাটে পাক্কা তিন ঘণ্টা। কথা নীরবতা কথা।
এর মধ্যে আবার কালোকফি চলে।
নারীর মুখের কথা ফুরায় না। যেন ঝুমঝুম বৃষ্টি।
এবার উঠতে হবে।
সিওর।
নারী বললেন, কত বছর পর দেখা হলো আমাদের!
বিশ বছর তো হবেই। ভেবেছিলাম দেখা হবে না কখনও!
ছেলেটির গায়ে বেঁধে কত বল্লম!
মেয়েটির মনে কত মেয়ে মরে যায়! পুরুষের পালটা আবৃত্তি।
এ যেন নাটকের মহড়া। তারপর রাজ্যের নীরবতা। দু’জন সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামেন। পাশাপাশি।
দু’জন মানুষ।
রাগ নেই। বিরাগ নেই।
নারী এবার গাড়িতে ওঠে বসেন। ড্রাইভার স্টার্ট দেয়।
পুরুষ বললেন, খুব ভালো সময় কাটল।
আমারও।
দেখা হবে।
নিশ্চয়ই দেখা হবে।
দু’জন টাটা বিনিময় করেন। বাই।
কয়েক মিনিট পরে পুরুষটির মোবাইলে একটি মেসেজ আসে। আপনি সত্যি একজন চমৎকার মানুষ।
আপনিও।
ফিরতি মেসেজ দেয় পুরুষটি, নারীর উদ্দেশে।