সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই আকরাম হত্যার অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি। ভাই হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৫ বোন।
তিনি অভিযোগ করেন, খুলনায় বাবুল আক্তারের বাবা পুলিশে ও বর্ণীর বাবা বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। থাকতেন পাশাপাশি বাসায়। সেই সুবাদে বাবুল-বর্ণীর মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি আকরামের সঙ্গে বিয়ে হয় বর্ণীর। অন্যদিকে পারিবারিকভাবে মিতুকে বিয়ে করেন বাবুল। কিন্তু বিয়ের পরও বাবুল আর বর্ণীর মধ্যে যোগাযোগ ছিল। পরে বিষয়টা জানা-জানি হয় বিয়ের পর।
এরই মাঝে আকরামের একটি সন্তান হয়। সন্তান জন্মকালে বর্ণী যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন প্রতিদিনই এসপি বাবুল আক্তার হাসপাতালে আসতেন। হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পর বর্ণীকে বাবুল আক্তারের বোন লাবনীর বাসায় নিয়ে তোলা হয়। বিভিন্ন সময় বর্ণীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন বাবুল আক্তার। এসআই আকরাম বিদেশে জাতিসংঘ মিশনে থাকাবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলতেন বর্ণী।
২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাবুলের সঙ্গে কূটকৌশল করে আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা আসার পরামর্শ দেয় বর্ণী। পথে সন্ত্রাসী ফিট করে রাখে সে। এর পর ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার বড়দাহ নামক স্থানে মহাসড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় আকরামকে উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আকরামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
জান্নাত আরা রিনি আরও অভিযোগ করেন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন আকরামের অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। বর্ণী স্যুপের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে আকরামকে খাওয়ায়।
এর পর ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ আকরাম মারা যান। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার স্ত্রী বর্ণী আকরামের লাশ গ্রহণ করে। তখন পুলিশ ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে। লাশ ঝিনাইদহে আনার সময় বর্ণী না আনার জন্য নানা ভনিতা করে। পরে ঝিনাইদহে এনে দাফন করা হয়। বর্ণীর বাবা একমাত্র জামাইয়ের জানাজায় অংশ না নিয়ে বর্ণীসহ পরিবারের অন্যদের নিয়ে বাবুল আক্তারের মাগুরার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ময়নাতদন্তের সময় চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তখনই সন্দেহ হয় এটি হত্যা। কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এ ছাড়া তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি।
পরবর্তীতে বাবুল আক্তার, বর্ণী ও তার ফুফাতো ভাই সাদিমুল ইসলাম মুনকে আসামি করে আদালতে মামলা করা হয়। পরে লাশ পুনরায় তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। যে রিপোর্টও প্রভাবিত করে বাবুল আক্তার।.